সিরাজগঞ্জে স্কুলশিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে হামলা, ৩ জনকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

বেতিল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের মূল ফটক
ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে বেতিল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে হামলার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, হামলাকারীদের মারধরে ১১ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের নামে তিন শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকালে শিক্ষার্থীরা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান, পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল সালামসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে কলেজের সামনে মানববন্ধন করে। ওই মানববন্ধনে স্কুল শাখার শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকেরা যোগ দেন। এ সময় বিদ্যালয়ের দপ্তরি-কর্মচারী, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও বহিরাগত দুর্বৃত্তরা মানববন্ধনে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যানার–ফেস্টুন ছিনিয়ে নেয়। হামলাকারীদের মারধরে কয়েক শিক্ষার্থী আহত হয়।

খবর পেয়ে এনায়েতপুর থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মানববন্ধনকারীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ তিন শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কাছে সোপর্দ করে। পরিচালনা কমিটি ওই তিন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছে বলে দাবি করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এদিকে নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল ১০টার দিকে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আজুগড়া এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করতে যায়। এ সময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে পুলিশ এক সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে সেখানে উপস্থিত সংবাদিকদের সঙ্গে উপপরিদর্শক প্রণয় কুমারের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। আজ সকাল ১০টায় সপ্তম ও নবম শ্রেণির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এর আগে সাড়ে নয়টার দিকে বিদ্যালয় শাখার প্রায় সব শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মানববন্ধন শুরু করেন। অভিভাবক আবদুল্লাহ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নূর নবী, নূরী খাতুন, অভিভাবক আবদুল হালিম ও আক্তারুজ্জামান।

দুপুর ১২টার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা চলা অবস্থায় অফিস কক্ষে শতাধিক লোক নিয়ে বৈঠক চলছে। ওই বৈঠকে নবম শ্রেণির ইমরান শেখ ও আলিফ হোসেন এবং সপ্তম শ্রেণির আবদুল্লাহ প্রামাণিকের কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজে মুচলেকা নিচ্ছিল পরিচালনা কমিটি। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বৈঠক স্থগিত করেন অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান। ওই বৈঠকে পরিচালনা কমিটির সদস্য সেনা দালাল, স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাফিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, মানববন্ধনের নামে কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিল। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থীকে তাদের অভিভাবকদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের ওপর কোনো নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা দিয়ে এভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওদের পরীক্ষার ব্যবস্থা পরে করা হবে।’

নির্যাতনের শিকার ইমরান শেখ বলে, সেনা দালালের নেতৃত্বে নাজমুল নামে এক ব্যক্তি তাকে এলোপাতাড়ি কিল–ঘুষি মারেন। তবে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য তাকে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখানো হয়। মানববন্ধন করায় তাদের নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ এলে তাদের পরীক্ষার খাতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মারধরের কারণে তখন লেখার মতো অবস্থা ছিল না। তাই তারা তিনজন খাতায় শুধু নাম ও রোল নম্বর লিখে চলে এসেছে।
নির্যাতনের শিকার আলিফ হোসেনের বাবা আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে কী কারণে আটক করা হয়েছে, সেটি আমাকে এখনো জানানো হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না।’

আহত অন্য শিক্ষার্থীরা হলো—কাউছার আহমেদ, আজিজুল সরকার, মারুফ হোসেন, হৃদয় হোসেন, আবদুল্লাহ প্রামাণিক, মিলন হোসেন, হাবিবুর রহমান ও আইয়ুব আলী। আহত শিক্ষার্থী মিলন হোসেন প্রথম আলোকে বলে, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন শুরু করি। এ সময় বিদ্যালয়ের কয়েকজন দপ্তরি-কর্মচারী, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও বহিরাগত ব্যক্তিরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ১০–১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুস সালাম একজন শিল্পপতি। তিনি মূলত ঢাকায় থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও ছাত্রদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে একাধিকবার তাঁর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে আবদুস সালাম কোনো সাড়া দেননি।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশের কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।