খারাপ নির্বাচনের নজির সৃষ্টি করে ইজ্জত খোয়াতে চাই না: রাশিদা সুলতানা

নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নওগাঁ-২ আসনের প্রার্থী, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানাছবি: প্রথম আলো

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন দেশে-বিদেশে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হিসেবে গণ্য হয়েছে। এ কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটা উচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশন এই অবস্থান থেকে সরে আসবে না। ভবিষ্যতেও খারাপ নির্বাচনের নজির সৃষ্টি করে ইজ্জত খোয়াতে চান না বলে মন্তব্য তাঁর।

আজ রোববার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্থগিত হওয়া নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বেগম রাশেদা সুলতানা এসব কথা বলেন।

বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘নির্বাচন গ্রহণযোগ্য, নিষ্কণ্টক ও স্বচ্ছ করা কেবল নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট সবার দায় আছে। আমরা আন্তরিকভাবে চেয়েছিলাম বলেই ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য করতে পেরেছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার নিদর্শন সৃষ্টি করেছে। এই নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ না হতো, তাহলে এত বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারতেন না। এমনকি সারা দেশে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী পরাজিত হতেন না।’

মতবিনিময়ের সময় উপস্থিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) এইচ এম আখতারুল আলম এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) মেহেদী মাহমুদ রেজা অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থীর অনুসারী নেতা-কর্মীরা তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছেন। ভোটকেন্দ্রে গেলে ভোটের পরে ওই ভোটারদের নানাভাবে ক্ষতি করা হবে এমন হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু শিক্ষক সংগঠনের নেতা ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, যাঁদের অনেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এই ধরনের ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এসব অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচনও আমাদের কাছে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বরং এই নির্বাচনে আমাদের আরও কড়া নজর থাকবে। এই নির্বাচনে কোনো খারাপ নজির সৃষ্টি হোক, এটা কোনোভাবেই আমরা চাই না। ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, ভোট দিতে বাধা দেওয়া কিংবা ভোট জালিয়াতির অভিযোগ পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হতে পারে। এমনকি গাইবান্ধার একটি আসনে উপনির্বাচনের মতো প্রয়োজন পড়লে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করা হবে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মো. হুমায়ুন কবির, রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি ফয়সল মাহমুদ, নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক, রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আট দিন আগে গত ২৯ ডিসেম্বর নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) আমিনুল ইসলাম মারা গেলে ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। পরবর্তী সময়ে গত ৮ জানুয়ারি ওই আসনের নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণা করে ইসি। নতুন তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আসনটিতে মোট চারজন প্রার্থী সংসদ সদস্য পদের জন্য লড়ছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির তোফাজ্জল হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আখতারুল আলম ও মেহেদী মাহমুদ রেজা।