খুলনায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সাক্ষাৎকার

কেন্দ্রে ভোটার নেওয়াই প্রধান চ্যালেঞ্জ

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আগামীকাল সোমবার ভোট গ্রহণ। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক। গতবার নগরবাসীর কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেগুলোর অনেক কিছুই তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এবার ৪০ দফা কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।

তালুকদার আবদুল খালেক
ফাইল ছবি
প্রশ্ন:

নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি কেমন মনে করছেন?

তালুকদার আবদুল খালেক: আমি এক মাসে ৩১টি ওয়ার্ডের প্রতিটি জায়গায় গিয়েছি। মানুষকে আমি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য বলেছি। এবার ভোটাররা জানেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হবে। আমরা চাই অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন শেষ হোক। এ পর্যন্ত খুলনা শহরে এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি যে ভোট গ্রহণে বাধাবিপত্তি বা কোনো ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। তাই আমি মনে করি শান্তিপূর্ণভাবেই, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রশ্ন:

নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কেমন হতে পারে?

তালুকদার আবদুল খালেক: আমি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তাতে তাঁরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, আমি মনে করি ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়বে।

প্রশ্ন:

১৩ ও ২৪ নম্বর দুটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। ওই দুই ওয়ার্ডে ভোটার কম হতে পারে?

তালুকদার আবদুল খালেক: যে দুজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সাংগঠনিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেকোনোভাবে ওয়ার্ডে ৬৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি দেখাতে হবে। এর জন্য যা যা করার তা তাঁরা করবেন।

প্রশ্ন:

গতবার নির্বাচনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন?

তালুকদার আবদুল খালেক: প্রতিশ্রুতির মধ্যে প্রধান ছিল নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন। ওই কাজে প্রধানমন্ত্রী আমাকে ৮৩১ কোটি টাকা দিয়েছেন। নগরের যত ড্রেন আছে, তা ফুটপাতসহ নির্মাণ ওই প্রকল্পের অংশ। করোনার কারণে দুই বছর কাজ বন্ধ থাকায় তা শেষ করা যায়নি। ওই কাজগুলো যখন দৃশ্যমান হবে, তখন খুলনার চেহারাই পরিবর্তন হয়ে যাবে।

প্রশ্ন:

আবার মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীর জন্য কী করতে চান?

তালুকদার আবদুল খালেক: আমার প্রথম কাজ হলো যে কাজগুলো চলমান আছে, সেগুলো শেষ করা। আমাদের ২২টি খাল রয়েছে, ওই খালগুলো প্রবাহিত হয়েছে সিটি করপোরেশনের পাশের বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে। এর মূল উৎস কাজিবাছা, রূপসা ও ভৈরব নদী। ওই নদীগুলো পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে, এতে শেষ ভাটা ছাড়া শহরের পানি বের হয় না। তাই রূপসা ও ভৈরব নদী খননের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সিআরডিপির দ্বিতীয় ফেজে জায়গা কেনা আছে। সেই জায়গায় ইতিমধ্যে ৫২ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। ওই প্রকল্পে বর্জ্য থেকে ডিজেল, সার ও বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এই কাজ হয়ে গেলে সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ টন বর্জ্য লাগবে। এ ছাড়া আড়ংঘাটার শলুয়া এলাকায় জলবায়ু ট্রাস্ট থেকে পাওয়া পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়েছে। সেখানেও আরেকটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেখান থেকেও বিদ্যুৎ, সার ও ডিজেল উৎপাদন হবে।

প্রশ্ন:

বিএনপি নির্বাচনে না আসাটাকে কীভাবে দেখছেন?

তালুকদার আবদুল খালেক: এটা তাদের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনার ব্যাপার। আমি মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির আসা উচিত ছিল। তার কারণ, কর্মী ধরে রাখার জন্য নির্বাচনই হলো একমাত্র মাধ্যম। এটা না করলে কর্মীরা আস্তে আস্তে দূরে সরে যায়।

প্রশ্ন:

দলীয়ভাবে সবার সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছেন?

তালুকদার আবদুল খালেক: সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন। কোনো কোনো ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে একাধিক আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছেন, তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মেয়রের ব্যাপারে সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন।

প্রশ্ন:

এবারের ভোটে আপনাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী?

তালুকদার আবদুল খালেক: কেন্দ্রে ভোটার নেওয়াই হলো প্রধান চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, আগ্রহ থাকলেও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না।