থোকায় থোকায় ঝুলছে বিদেশি ফল রাম্বুটান, ৫০ লাখ টাকা বিক্রির আশা
সবুজে ঘেরা গ্রাম ময়মনসিংহের ভালুকার গোয়ারী। এ গ্রামের লাল মাটিতে চাষ হয়েছে বিদেশি ফল রাম্বুটান। বাগানজুড়ে সবুজ পাতার ভেতরে পাকা টসটসে রাম্বুটান দেখে চোখ জুড়ায় যে কারও। খেতেও সুস্বাদু। প্রত্যন্ত গ্রামে ছয় একর জমি ইজারা নিয়ে রাম্বুটানসহ দেশি–বিদেশি নানা ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন দুই বন্ধু শেখ মামুন ও আশরাফ উদ্দিন।
রাম্বুটান মূলত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ফল। তবে গোয়ারী গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে এই ফলের চাষ হচ্ছে। রাম্বুটান ছাড়াও ২০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফলের প্রায় এক হাজার গাছ আছে বাগানটিতে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, রাম্বুটানের ফলন এত ভালো হয়েছে যে এ বছর ৫০ লাখ টাকার বেশি বিক্রি হতে পারে।
দুই বন্ধুর মধ্যে মামুন পেশায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী এবং আশরাফ উদ্দিন শিক্ষক। নিজের পেশার পাশাপাশি ‘তাইফ এগ্রো’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তাঁরা।
বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছে দেশি-বিদেশি ফল। তাঁদের বাগানে ২১২টি রাম্বুটানগাছ আছে। এ ছাড়া আছে অ্যাভোকাডো, পার্সিমন, লংগান, থাই লংগান, মিয়াজাকি আম, কুড়িয়া ও থাই জাম, সফেদাসহ দেশি-বিদেশি ২০ জাতের ফলের গাছ।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রাম্বুটান ফলটি লিচু পরিবারের। রাম্বুটান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় ফল হিসেবে পরিচিত। রাম্বুটান চীন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয়। ফলটির খোসা হালকা চুলের মতো আবরণে ঢাকা। মালয় ভাষায় ‘রাম্বুট’ শব্দের অর্থ চুল। তাই অনেকে একে হেয়ারি লিচু, কেউ কেউ ফলের রানিও বলেন। এর আকার মাঝারি ধরনের এবং বর্ণ লাল। এটি মিষ্টি স্বাদযুক্ত একটি ফল। এই ফল চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে রাম্বুটান চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন ভালুকার চাষিরা।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভালুকার মাটি ও আবহাওয়া যেকোনো ফল চাষের জন্য উপযোগী। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার ফল রাম্বুটান এখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে, যা সম্ভাবনাময়। রাম্বুটানের চারা উৎপাদন বেশ কঠিন। গবেষণা করে চারা উৎপাদন করা গেলে এ ফল সারা দেশে সম্প্রসারণ করা সম্ভব।
সম্প্রতি বাগানটি ঘুরে দেখা যায়, এখানে গরু লালন–পালন করা হয়। গোবর থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে ব্যবহার করা হচ্ছে ফল বাগানে। তাতে সারের খরচ কমেছে।
বাগানের তত্ত্বাবধায়ক সোহেল রানা বলেন, বাগানটি করা হয় ২০২০ সালে। মূলত রাম্বুটান চাষের লক্ষ্য নিয়েই বাগানটির যাত্রা শুরু হয়। পরে অন্য গাছও লাগানো হয়। রাম্বুটান ফল খেতে সুস্বাদু হওয়ায় থাইল্যান্ড থেকে এ গাছের ৪০০ চারা আমদানি করা হয়। শুরুতে না বুঝে রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে ১৮৮টি গাছ মারা যায়। বর্তমানে ২১২টি রাম্বুটানগাছ আছে। ২০২৩ সালে প্রথম ফল আসতে শুরু করে। এবার সব গাছেই ফল এসেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করায় ফলন হয়েছে কয়েক গুণ বেশি।
সোয়েল রানা বলেন, স্থানীয়ভাবে এই ফলের চাহিদা খুব বেশি নয়। তবে অনলাইনে বেশ ভালো বিক্রি হয়। ঢাকা থেকেও অনেকে চাহিদা পাঠান। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে পাইকারিতে রাম্বুটান বিক্রি করেন তাঁরা। রাম্বুটানগাছে বছরে দুবার ফল হয়। বছরের জুন-জুলাই ও নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পাকা টসটসে রাম্বুটান বিক্রির উপযোগী হয়।
রাম্বুটানের বাগান দেখতে অনেকেই এখানে আসেন। এমন একজন জাহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কেউ নিজে না এলে বুঝানো যাবে না কত সুন্দর এ বিদেশি ফলটি! কৃষি অফিসের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাগানটি দেখতে এসেছেন তিনি। এই বাগান দেখে তিনি উৎসাহী। নিজে করতে চান, বন্ধুদেরও উৎসাহ দেবেন।
দর্শনার্থী অনেকে রাম্বুটান কিনে নিয়ে যান। গাছ থেকে ছিঁড়ে বাগানে দাঁড়িয়েও খান অনেকে। এমন এক দর্শনার্থী আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এটির স্বাদ অতুলনীয়। আমি মালয়েশিয়ায় খেয়েছি। দেশেও খেলাম। আমার কাছে মনে হলো, আমাদের দেশের রাম্বুটান স্বাদে অনন্য।’