ঝালকাঠি সরকারি কলেজ
উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষক দিয়ে স্নাতকে পাঠদান
শিক্ষকের পদ আছে ৫৪টি। কর্মরত আছেন ৩১ জন। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
ঝালকাঠি সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষক ও জনবল দিয়ে চলছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির পাঠদান। বিভিন্ন বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম।
এ কলেজে পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা ও শ্রেণিকক্ষ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা বরিশালসহ দূরদূরান্তের কলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন।
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঝালকাঠি সরকারি কলেজ। জেলার সর্ববৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আয়তন ১৪ দশমিক ৬ একর। ঝালকাঠি সদরের বাদলকাঠি গ্রামে কলেজের নামে আরও ৬ একর জমি আছে। বর্তমানে এ কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। আবাসিক সুবিধা থাকায় চারটি উপজেলার অনেক গরিব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে কলেজটিতে।
কলেজের অধ্যক্ষ ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ আছে ৫৪টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ৩১ জন। দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিতে ৩ জন, দর্শনে ৩ জন, ইতিহাসে ৩ জন, রসায়ন, গণিত ও উদ্ভিদবিদ্যায় ২ জন করে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া বাংলায়, ইসলামের ইতিহাস, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, পদার্থবিজ্ঞান ও প্রাণিবিদ্যায় ১ জন করে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। গ্রন্থাগারের দুটি পদ দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে।
তবে এনাম কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি কলেজে মাধ্যমিক থেকে ডিগ্রি পাস কোর্সে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ প্রতি বিষয়ে দুজন করে শিক্ষক থাকার কথা। উচ্চমাধ্যমিকে ১৮টি ও ডিগ্রি পাস কোর্সে ১৪টি বিষয় চালু আছে। এ কোর্সের ৩২টি বিষয়ে ৬৪ জন শিক্ষক থাকার কথা। আবার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ১২ জন করে ২৪ জন শিক্ষক থাকার কথা। সেখানে আছেন মাত্র ৪ জন।
কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে গেছেন। গত বছর পাসের হার ৯৩ হলেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ৭ জন। শিক্ষকসংকট থাকায় শিক্ষকেরা স্নাতক-স্নাতকোত্তর শ্রেণির ক্লাস নিতে গিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের দিকে নজর দিতে পারেন না। কোনো শিক্ষক ছুটিতে গেলে কিংবা প্রশিক্ষণে গেলে সে বিষয়ে পাঠদান বন্ধ থাকে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে বাংলা, ইংরেজি, দর্শন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা—আটটি বিষয় নিয়ে কলেজের স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়। এরপর ২০১৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও হিসাববিজ্ঞান এই দুই বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। কলেজে ছাত্রীদের জন্য ৫ তলাবিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবন রয়েছে। এখানে ১৪২ জন ছাত্রী থাকতে পারেন। আবার ১০০ জন ছাত্রের আবাসিক সুবিধাসংবলিত ৪তলাবিশিষ্ট একটি ভবন রয়েছে। আরও রয়েছে পাঁচতলার একটি অনার্স ভবন। এ ছাড়া ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০টি শ্রেণিকক্ষের সুবিধাসংবলিত ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণাধীন আছে। তবে কলেজের বিজ্ঞান ভবন দুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (সিইডিপি) আওতায় ঝালকাঠি সরকারি কলেজে উন্নয়ন কার্যক্রম চললেও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের কাঙ্ক্ষিত পদ না বাড়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
স্নাতক বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু তাহের বলেন, ‘কলেজে শিক্ষকসংকট প্রকট। এক বিষয়ের পাঠদান অন্য বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে করানোর কারণে আমাদের ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে। অনেক আশা নিয়ে এ কলেজে ভর্তি হয়েছি। সেই আশার প্রতিফলন ঘটবে বলে বলে মনে হচ্ছে না।’
ইংরেজি স্নাতক বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরা আক্তার বলেন, এ জেলার শিক্ষার্থীরা বরিশালসহ দূরদূরান্তের কলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন। শূন্য পদ পূরণ ও বিষয়ভিত্তিক নতুন শিক্ষকের পদায়ন পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।
কলেজের অধ্যক্ষ ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষকদের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরে একাধিকবার লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে। এটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ কলেজ হওয়া সত্ত্বেও চরম অবহেলার শিকার। অধ্যক্ষের বাসভবন ও শিক্ষকনিবাস নেই। কোনো শিক্ষক কলেজটিতে এলেও বেশি দিন থাকেন না।