২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

গোয়ালন্দে পদ্মায় বসতভিটা ও কৃষিজমি বিলীন, ভাঙন আতঙ্কে কাটছে রাত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙনে নিজেদের প্রায় ৯০ বিঘা জমি বিলীন হয়েছে। দুই দফা ভাঙনের পর আশ্রয় নেন দেবগ্রামে। এখানেও ভাঙন বাড়ির কাছে এসে ঠেকেছে। কী আছে ভবিষ্যতে, সেই চিন্তায় কৃষক কুদ্দুস সরদার। গতকাল রোববার বিকেলে দেবগ্রামে পদ্মা নদীর পাড়েছবি: এম রাশেদুল হক

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি ও স্রোত বেড়ে যাওয়ায় তিন দিন ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ইতিমধ্যে দুটি বসতভিটা ও ২০ একর কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল রোববারও চারটি পরিবার অন্যত্র সরে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারছেন না পদ্মাপারের মানুষেরা।

গতকাল বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের দেবগ্রাম ও কাওয়ালজানি এলাকায় ভাঙন চলছে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে স্রোত দেখা দেওয়ায় থেমে থেমে বসতভিটা ও কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর পারে থাকা পরিবারগুলো ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। চোখের সামনে আবাদি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে নানা বয়সী অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাজে সহযোগিতা করছেন।

মেয়ের বসতঘর ভাঙার খবর পেয়ে দেবগ্রামে এসেছেন বৃদ্ধা সনেকা বেগম (৮০)। বয়সের ভারে কাজ করার সক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, ‘আমার উনি (স্বামী) অনেক আগেই মারা গেছে। আমাদের এই গ্রামেই (দেবগ্রাম) বাড়ি ছিল। অনেক আগে নদীতে সব ভাইঙ্গা নিইয়া গেলে দূরে চইলা যাই। আজ আবার মেয়ের বাড়ি ভাইঙ্গা যাচ্ছে শুনে আইছি। আইসা দেহি দুই দিনেই সব শেষ হইয়া গেছে।’

পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও স্রোত বেড়ে যাওয়ায় তিন দিন ধরে গোয়ালন্দের দেবগ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই দিনের ভাঙন বসতভিটায় এসে ঠেকেছে। দ্রুত সংসারে জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছে এই পরিবার। গতকাল রোববার বিকেলে
ছবি: এম রাশেদুল হক

নদী থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে খবির সরদারের বাড়ি। একসময় নদী থেকে এই বাড়ি ছিল এক মাইল দূরে। ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির কিনারে নদী এসেছে। এত দিন টিকলেও শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়ি রক্ষা করতে পারছেন না। আকস্মিক ভাঙনে কোথায় যাবেন, এখনো ঠিক করতে পারেননি। শ্বশুরবাড়ির লোকজন, মেয়ে ও জামাই পরিবারের লোকজন এসে তাঁকে কাজে সহযোগিতা করছেন। ঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন খবির সরদারের মেয়ে। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে ভাঙছে। গতকাল সারা রাত আমরা একটুও ঘুমাইনি। চাপের পর চাপ ভেঙে পড়ছে। ভয়ে সারা রাত সবাই নদীর পাড়েই বসে ছিলাম। আপাতত ঘরের জিনিসপত্র গ্রামের একজনের বাড়ি রাখছি, সরিয়ে নেওয়া হবে।’

কাওয়ালজানির সালাম সরদার বলেন, বসতভিটা থেকে ঘরসহ জিনিসপত্র দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হচ্ছে। তাঁর প্রতিবেশী খবির সরদার, আইয়ুব সরদার ও সামাদ সরদার বাড়ি সরিয়ে ফেলছেন। ঘর সরাতে পারলেও ভিটা রক্ষা করতে পারছেন না। চোখের পলকে একে একে ভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

তিন দিন ধরে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আবাদি কৃষিজমি, বসতভিটা। ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে অনেকে দূর–দূরান্ত থেকে এসেছেন। গতকাল রোববার বিকেলে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউপির কাওয়ালজানি গ্রামে
ছবি: এম রাশেদুল হক

দেবগ্রামের কুদ্দুস সরদার বলেন, নদী থেকে তাঁর বাড়ি প্রায় ২০০ গজ দূরে থাকলেও আতঙ্কে দিন পার করছেন। ভাঙন অব্যাহত থাকলে কাওয়ালজানি ও দেবগ্রাম বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল ধোপাগাথি এলাকায়। প্রায় ২০ বছর আগে ভাঙনের শিকার হয়ে দেবগ্রাম আসি। এখানেও ভাঙনে গ্রামের কয়েক শ পরিবার অন্যত্র গেছে। তাঁদের প্রায় ৯০ বিঘার মতো জমি ছিল। সব নদীতে বিলীন হয়েছে।’

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনও বেড়েছে। তিন দিনের ভাঙনে দেবগ্রাম ও কাওয়ালজানির অন্তত ২৫ একর কৃষিজমি বিলীন হয়েছে। রোববার কাওয়ালজানি নদীর পাড়ে থাকা চারটি পরিবার সরে গেছে। এই দুই মৌজার শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।

ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেবগ্রাম ও কাওয়ালজানির প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।