বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের অপসারণ দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে আধা ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করেন। এরপর তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। বেলা দেড়টার দিকে মিছিল বের করে প্রশাসনের প্রতীকী কফিন নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আধা ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।
এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, অবিলম্বে উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে তাঁরা দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেওয়ার কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের দেওয়া ২২ দফা দাবি ছয় মাসেও বাস্তবায়ন করেননি বলে জানান আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অংশীজন হিসেবে শিক্ষার্থীদের দাবিকে উপাচার্য আমলে নিচ্ছেন না; বরং যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নামে মামলা দায়ের করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন দমাতে বিভিন্ন হুমকি ও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, এটা কখনোই কাম্য নয়। এর আগে যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে গেলে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নাম, অজ্ঞাতসহ ৪২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই এখন উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজ আমাদের কর্মসূচি ছিল প্রশাসনিক শাটডাউন। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমরা একাডেমিক শাটডাউনে যাইনি। স্বৈরাচার উপাচার্যের সঙ্গে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কোনো কার্যক্রম করতে না পারেন, সে জন্য এই কর্মসূচি। নতুন উপাচার্য আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে যদি উপাচার্য পদত্যাগ না করেন, তবে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব। প্রয়োজনে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেব।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ, আইন বিভাগের মাইনুল ইসলাম, এস এম ওয়াহিদুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের রাকিন খান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নাজমুল ঢালি, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের মাসুম বিল্লাহ, বাংলা বিভাগের শহিদুল ইসলাম ও আশিকুর রহমান।
১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ ও পাতানো সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাঁর বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর চার দফা দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের বিভিন্ন কমিটি থেকে অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।
২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তাঁরা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার সিন্ডিকেট সভায় মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। গত রোববার উপাচার্য শুচিতা শরমিন সংবাদ সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
ওই সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও জিডি প্রত্যাহার করার কথা জানান উপাচার্য। সেই সঙ্গে সিন্ডিকেট সভায় ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক শিক্ষক–কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে ও ব্যবস্থা নিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান শুচিতা শরমিন।
সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুহসিন উদ্দীনকে অব্যাহতির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওই অংশ। এতে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচি দেন। তৃতীয় দিনের মতো আজ এই দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর।