সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী। এতে মহাসড়ক দুটিতে সৃষ্ট যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলকারী যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আন্দোলনকারীরা ১১ ঘণ্টা পর আজকের মতো অবরোধ তুলে নিলে দুই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে এত দিন ফরিদপুর-৪ আসন গঠিত ছিল। আর ফরিদপুর-২ আসন ছিল নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে। ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন এলাকাবাসী। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে তাঁরা আবার মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ বুধবার সকাল সাতটা থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া, হামিরদী, মাধবপুর ও নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এতে ভাঙ্গা হয়ে দুই মহাসড়ক দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলায় যাতায়াত করা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে মহাসড়কের ওপর অবরোধকারীদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ১১ ঘণ্টা পর আজকের মতো অবরোধ স্থগিত করা হয়।
আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে যান চলাচল শুরু হয় এবং আটকে থাকা যাত্রীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাধিকবার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কথা হলেও আন্দোলনকারীরা মূল দাবি থেকে সরে আসেননি। এ জন্য আগামীকাল সকাল সাতটা থেকে তাঁরা আবার মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা বলেন, তাঁরা ভাঙ্গার সাধারণ মানুষ ভাঙ্গাকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে অন্য আসনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানেন না। এ সিদ্ধান্ত তাঁদের ইতিহাস ও অস্তিত্বকে আঘাত করেছে। প্রয়োজনে তাঁরা জীবন দেবেন, কিন্তু ভাঙ্গার মাটি কখনো কাউকে ছাড়বেন না। তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
আলগী ইউনিয়নের বালিয়াচড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমারত হোসেন বলেন, ‘ভাঙ্গা শুধু একটি মানচিত্রের ইউনিয়ন নয়। এটি আমাদের শিকড়, আবেগ ও অস্তিত্বের প্রতীক। প্রশাসন যদি ভাবে, আমরা অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেব, তবে তারা ভুল করছে। আমরা জানি, আন্দোলন মানে কষ্ট, যানজট ও ভোগান্তি। তবুও ভাঙ্গাকে রক্ষার প্রশ্নে আমরা আপস করব না। প্রয়োজনে দিনের পর দিন রাস্তায় বসে থাকব।’
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, সকাল সাড়ে সাতটা থেকে ভাঙ্গায় অবরোধের কারণে দুটি মহাসড়ক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সারাদিন অবরোধকারীরা মহাসড়ক দুটির বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে তাঁদের কর্মসূচি পালন করেন। তিনি বলেন, অনেক মানুষ হওয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আশার কথা হলো সন্ধ্যা ছয়টার দিকে অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নিলে দুটি মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।