খাদ্যতালিকায় কাটছাঁট করছেন মানুষেরা

চা-বিস্কুটের দোকান খুলে বসে আছেন মো. দুলাল। কিন্তু ক্রেতা আসছেন খুবই কম। গতকাল বিকেলে রাজশাহী নগরের তেরখাদিয়া এলাকায়প্রথম আলো

শহিদুল ইসলাম (৪৪) রাজশাহী নগরের একটি হার্ডওয়্যার দোকানের কর্মচারী। পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৬। মাসে বেতন পান আট হাজার টাকা। সংসারের ব্যয় সংকুলান করতে রাতে বাড়িতে গিয়ে বাড়তি হাতের কাজ করেন। কিন্তু দুই মাস ধরে আর কিছুতেই আয়–ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না।

সপ্তাহে দুই দিন মাংস খেতেন শহিদুল, এখন এক দিন খান। মাছ তিন দিন রাখতেন, সেটিও এক দিন করেছেন। তারপরও মুদিদোকানে ১৪ হাজার টাকা বাকি পড়েছে। মালিককে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। না বাড়ালে কী করবেন, তা এখনো ঠিক করতে পারেননি।

সব জিনিসের বাড়তি দামের কারণে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে শহিদুল ইসলামের মতো নিম্নমধ্যবিত্তের মানুষকে এই সংকটে পড়তে হয়েছে। মধ্যবিত্তের খাদ্যতালিকায় সবচেয়ে বেশি থাকে ডিম। রাজশাহীতে একটি ডিমের দাম ২ টাকা বেড়ে ১১ টাকা হয়েছে। নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষেরা যে ব্রয়লার মুরগি খেয়ে আমিষের চাহিদা মেটাতেন, সেটি এখন ১৪০ থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মাছ, সবজি, তেল, চাল, ডালের দামও বেড়েছে। লোকাল বাসে ২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা হয়েছে, অটোরিকশায় ৮ টাকার ভাড়া ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এমন অবস্থায় খাবারের তালিকা পাল্টে নিচ্ছেন মানুষ। একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রের একজন কর্মচারী (নাম প্রকাশ করতে চান না) জানান, তাঁর পরিবারের ছয় সদস্যের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাঁর। দুই মাস থেকে যা টানাটানিতে পড়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অটোরিকশার ভাড়া বাঁচাতে মাঝেমধ্যে হেঁটে বাসায় ফিরছেন। খাবার কমিয়েছেন। এর মধ্যে গত মাসে ধার করে ২ হাজার ১০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন। মুদিদোকানে বাকি পড়েছে। শুধু ওষুধটা ঠিক রেখেছেন। আর সব এলোমেলো হয়ে গেছে।

রাজশাহী নগরের একটি বেসরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক জুলফিকার আলী খান বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা বেতন পান। এ থেকে মাসে তাঁর আট হাজার টাকা বাড়িভাড়া দিতে হয়। গ্যাস বিল, কাজের মেয়ে ও ওয়াইফাই বাবদ মাসে তিন হাজার টাকা যায়। গ্রামে মা–বাবার হাতখরচ বাবদ চার হাজার টাকা দিতে হয়। হাতে থাকে পাঁচ হাজার টাকা। তাতে তাঁর হয় না। সুযোগমতো টিউশনি করেন। তা থেকে মাসে পাঁচ–সাত হাজার টাকা আসে। দুই মাস ধরে এই আয় দিয়ে তাঁর আর চলছে না। বাসায় গরুর মাংস একদম বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে মাঝেমধ্যে বড় মাছ কিনতেন। এখন ছোট মাছ কিনছেন। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ডিমের ব্যবহারও কমিয়ে দিয়েছেন। এভাবেই চলার চেষ্টা করছেন।

নগরের ষষ্ঠিতলা এলাকার রবিউল ইসলাম পাথর কেটে শিল্পকর্ম তৈরি করেন। তাঁর পরিবারের সদস্য পাঁচজন। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ আছে। আছে নিজের ওষুধের খরচ। রবিউল ইসলাম বলেন, ওষুধ, চাল ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচে হাত দিতে পারেননি, বাধ্য হয়ে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন এনেছেন। রান্নায় তেল আর পেঁয়াজ কমিয়ে দিয়েছেন। মাছ-মাংস বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু সপ্তাহে এক দিন একটি ব্রয়লার মুরগি কিনে এক টুকরা করে ভাগ করে খাচ্ছেন।