সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে রেল অবরোধের পর এবার সড়কও অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা ১টা ১০ মিনিটে নগরের টাইগারপাস মোড় অবরোধের মধ্যে দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এর ফলে নগরের ব্যস্ততম সড়ক টাইগারপাস দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে আজ বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে রেল অবরোধ করেন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, কক্সবাজারের ট্রেন আটকা পড়েছে। তবে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও রেলওয়ের কর্মকর্তারা একে শিডিউল–বিপর্যয় বলছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের ব্যানারে এ কর্মসূচি হচ্ছে।
এর বাইরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। সরকারি চাকরিতে সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ রেললাইন ছেড়ে টাইগারপাস মোড়ের দিকে রওনা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।
শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ এখনো রেললাইনে অবস্থান করছে। শিক্ষার্থীরা ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘নাতিপুতি কোটা নির্মূল করো, পোষ্য কোটার কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান করছেন। তাঁরা ‘ব্লকেড ব্লকেড, সারা বাংলা ব্লকেড’, ‘এসো বোন এসো ভাই, সংগ্রামে ভয় নাই’, ‘মেরুদণ্ড সোজা করো, কোটা ছাড়া চাকরি করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
জানতে চাইলে আন্দোলনে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল সিয়াম প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বাদে অন্য কোনো কোটা রাখা যাবে না। সব মিলিয়ে কোটা ৫ শতাংশ রাখতে হবে। উচ্চ আদালত আজকে যে রায় দিয়েছেন, সেটির প্রতি তাঁরা সম্মান জানান, কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা পথ থেকে যাবেন না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারীপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গতকাল মঙ্গলবার আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য আজ আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।