সুদানে ড্রোন হামলায় নিহত কুড়িগ্রামের দুই শান্তিরক্ষীর লাশ দাফন
সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ড্রোন হামলায় নিহত কুড়িগ্রামের দুই সেনাসদস্যের লাশ দেশে এসেছে। গতকাল শনিবার তাঁদের লাশ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর আজ রোববার দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে উলিপুর হেলিপ্যাডে আনা হয়। পরে সেখান থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিজ নিজ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। পরে পারিবারিকভাবে তাঁদের দাফন করা হয়।
নিহত সেনাসদস্যরা হলেন সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (৩৮) ও সৈনিক শান্ত মন্ডল (২৬)। শান্ত মন্ডল কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামের মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা। তিনি সাবেক সেনাসদস্য নুর ইসলাম মন্ডল ও সাহেরা বেগমের ছোট ছেলে। তাঁর বড় ভাই সোহাগ মন্ডল বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
অন্যদিকে সৈনিক মো. মমিনুল ইসলামের বাড়ি উলিপুর উপজেলার উত্তর পান্ডুল গ্রামে। তিনি দুই কন্যাসন্তানের জনক। বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ বছর।
আজ বেলা ২টা ২০ মিনিটে উলিপুর হেলিপ্যাডে অবতরণ করে সেনাবাহিনীর লাশবহনকারী হেলিকপ্টার। নিহত দুই সেনার লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পর দুই পরিবারেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। পরে বিকেলে চারটার দিকে শান্ত মন্ডল ও মমিনুল ইসলামকে নিজ নিজ পারিবার দাফন করে।
সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়, ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিকস বেজে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী ড্রোন হামলা চালায়। এতে ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত ও নয়জন আহত হন। নিহত সেনাসদস্যদের মধ্যে কুড়িগ্রামের শান্ত মন্ডল ও মমিনুল ইসলাম ছাড়াও একজন করে ছিলেন নাটোর, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ ও গাইবান্ধার বাসিন্দা।
শান্ত মন্ডল ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। চলতি বছরের ৫ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সুদানে যান। তাঁর স্ত্রী দিলরুবা খন্দকার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
শান্তর বড় ভাই সোহাগ মন্ডল বলেন, ‘ড্রোন হামলার দিন বিকেলেও ওর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয়েছিল। রাতে ড্রোন হামলার খবর পাই। পরে শান্তর সহযোদ্ধাদের ভিডিও কল দিয়ে নিশ্চিত হই, আমার ভাই আর নেই।’
সৈনিক মমিনুল ইসলাম প্রায় ১৮ বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মিশনে যাওয়ার আগে তিনি ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেন। চলতি বছরের অক্টোবরে ছুটিতে বাড়িতে এসে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে যান। মমিনুলের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘যাওয়ার সময় কইছিল, মা কান্না কোরো না, আমি তাড়াতাড়ি ফিরমু। এইভাবে ফিরবে জানলে বাপধনকে মুই (আমি) বিদেশ যাবার দিনু না হয়।’