সড়কজুড়ে গ্যাসের গন্ধ, বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা

তারাব মোড় থেকে বিসিক জামদানিশিল্প নগরী ও মহাসড়কের বরাব মোড়ে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি নিয়েই এলাকাবাসীর যত উৎকণ্ঠা।

সংযোগ থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া খালপাড় সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া এলাকায় একটি সড়কজুড়ে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই সড়কে দেখা যায় হাজারো বুদ্‌বুদ। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ওই সড়কের আশপাশের এলাকায়।

স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, সড়কের নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাস গ্যাসের সংযোগ লাইন ফুটো হয়ে এলাকায় গ্যাস ছড়াচ্ছে। মাসের পর মাস ধরে এ অবস্থা চললেও কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এরই মধ্যে এলাকায় দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত চারজন দগ্ধ হয়েছেন।

ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের তারাব বিশ্বরোড মোড় থেকে উত্তরে নেমে যাওয়া সড়কটি স্থানীয়ভাবে তারাব খালপাড় সড়ক নামে পরিচিত। এই সড়কের দুই পাশজুড়ে বসবাসকারী বাসিন্দাদের অধিকাংশই জামদানিশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি রয়েছে ছোট-বড় বেশ কিছু মিল–কারখানা। তারাব মোড় থেকে বিসিক জামদানিশিল্প নগরী ও মহাসড়কের বরাব মোড়ে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি নিয়েই এলাকাবাসীর যত উৎকণ্ঠা।

উৎকণ্ঠার কারণ জানা গেল গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দফায় সরেজমিন ঘুরে। তারাব মোড় থেকে সড়কে যেতেই দেখা গেল, পিচ ও ইটের খোয়া উঠে গিয়ে সড়কে ছোট–বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব গর্তে জমে থাকা পানিতে অসংখ্য বুদ্‌বুদ। এসব বুদ্‌বুদের ওপর দিয়ে চলাচল করছে রিকশা, ভ্যান, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। বুদ্‌বুদগুলোর কাছে গেলেই নাকে গ্যাসের গন্ধ ভেসে আসে।

সড়কের পাশের তামান্না জেনারেল স্টোর নামের একটি মুদিদোকানের মালিক লিয়াকত আলী জানান, ২৭ বছর ধরে এই সড়কের পাশে দোকান চালাচ্ছেন। দুই বছর আগে বর্ষায় দোকানের সামনে পানি জমলে প্রথমবারের মতো বুদ্‌বুদ দেখতে পান।

শুরুতে বিষয়টিকে পাত্তা দেননি। পরে ধীরে ধীরে বুদ্‌বুদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। চার মাস ধরে বুদ্‌বুদ ও গ্যাসের গন্ধ—দুটোই বেড়েছে। বৃষ্টি হলে দেড় কিলোমিটার সড়কটির বিভিন্ন অংশে এমন বুদ্‌বুদ দেখা যাচ্ছে। সড়কজুড়ে গ্যাস বের হওয়ার শব্দ ও গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

তামান্না স্টোর থেকে দক্ষিণে কয়েক গজ এগিয়ে গেলেই সড়কের পশ্চিম পাশে একটি টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক কলোনি। কলোনির সামনের ফটকে আলাপ করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আল মামুন, শামসুল ইসলাম, মো. মহসিনসহ বেশ কয়েকজন। তাঁরা জানান, সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া একটি নালার ভেতরে গ্যাস বের হওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। গ্যাসের গন্ধও ছড়িয়ে পড়েছে। তা নিয়েই নিজেদের মধ্যে আলাপ হচ্ছিল।

এই বাসিন্দারা জানান, পাঁচ মাস আগে সড়কটির পাশে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। পরে নালার ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন তখন ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা এসে আগুন নেভায়। তখন কেউ হতাহত হননি। এরই মধ্যে সম্প্রতি ৩০০ গজ দূরের একটি এলাকায় মরদেহ গোসল করানোর সময় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে ওই মরদেহের শরীর ঝলসে যায়। দগ্ধ হন এলাকার আরও চার তরুণ। এর পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে আগুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে একাধিকবার মৌখিকভাবে জানানো হলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের।

ওই এলাকায় ঘুরে সড়কের পাশে বিভিন্ন কলকারখানা ছাড়াও অন্তত সাতটি মাদ্রাসা ও একটি বিদ্যালয় দেখা গেছে। কথা হয় খালপাড় জামিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ভাইস প্রিন্সিপাল মো. আবদুল্লাহর সঙ্গে। তাঁর মাদ্রাসায় প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী আবাসিক থেকে পড়াশোনা করছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বড় দুর্ঘটনার শঙ্কার মধ্যেই এই শিশুদের নিয়ে থাকছি। বহুদিন ধরেই গ্যাসের শব্দ ও গন্ধ পাই।’

জানতে চাইলে তারাব পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমার জানা মতে, সড়কের নিচে তিতাসের পুরোনো লাইন আছে। সেখান থেকেই পুরো এলাকায় গ্যাস লিকেজ হচ্ছে। আমাদের আশপাশের এলাকায় গত দুই বছরে গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুন লেগে দুজন মারা গেছেন। ড্রেনের স্ল্যাব স্থাপন করতে গিয়ে গ্যাসের আগুনে আমার এক ওয়েল্ডিং শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। এ বিষয়ে কয়েকবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো ফলাফল পাইনি।’

তবে বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সোনারগাঁ আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এরশাদ মাহমুদ। 

যোগাযোগ করলে গত শনিবার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। আমরা খোঁজ নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেব।’