প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় চা-শ্রমিকেরা

ধর্মঘটের ১৫তম দিনে সভা–সমাবেশ না করে নিজেদের মধ্যে আলাপ–আলোচনা করছেন শ্রমিকেরা। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। শনিবার শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানে
ছবি: প্রথম আলো

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন চা-শ্রমিকেরা। ধর্মঘটের অন্যান্য দিনের মতো সভা-সমাবেশ না করলেও শ্রমিকেরা বাগানে কাজে না গিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগানমালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটার অপেক্ষা করছেন চা-শ্রমিকেরা।

আন্দোলনের শুরু থেকেই শ্রমিকেরা বারবার প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা শুনে কাজে ফেরার কথা বলেছেন। এরই মধ্যে আজ শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বাগানমালিকদের সঙ্গে সভা করবেন। বিকেল চারটায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন

আজ সকাল থেকে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা–বাগান ঘুরে শ্রমিকদের তেমন একটা দেখা যায়নি। বেশির ভাগ শ্রমিকই বাড়িতে আছেন। ভাড়াউড়া চা–বাগানের দুর্গামণ্ডপের সামনে প্রায় ৪০ জন পুরুষ ও নারী চা-শ্রমিককে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল, প্রধানমন্ত্রী কত টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন?

উষা হাজরা নামের এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কত দিন ধরে আন্দোলন করছি। আমাদের ঘরে এখন খাবার নেই। আমরা ১২০ টাকায় কত কষ্ট করে সংসার চালাই, সেটা আমরাই জানি। আজ বিকেলে মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনার অপেক্ষায় আছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য একটি মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন। তিনি বললেই আমরা সব ধর্মঘট বাদ দিয়ে কাজে যোগ দেব।’

উষা হাজরা আরও বলেন, ‘আমরা তো আন্দোলন করতে চাই না। পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছি। আমাদের জীবন দাসত্বের জীবন। ১২০ টাকা মজুরি নিয়ে খাবার খাই, বাচ্চাদের পড়াশোনা করাই, সামাজিকতা রক্ষা করি। কীভাবে করি, সেটা আমাদের সঙ্গে থাকলেই বুঝবেন।’

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ দিন ধরে চা-শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছেন। ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে সংসার চলে না। এ জন্য শ্রমিকেরা খেয়ে না–খেয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। শুনেছেন, প্রধানমন্ত্রী আজ বাগানমালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। শ্রমিকেরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, চা-শ্রমিকেরা সেটা মেনে নেবেন। এ জন্য তিনি অবশ্যই সবকিছু বিবেচনা করে একটি মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করবেন।

আরও পড়ুন

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশের চা–বাগানগুলোয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করছেন শ্রমিকেরা। দাবি আদায়ে গত কয়েক দিন উত্তাল ছিল চা–বাগানগুলো। আন্দোলন সফল করতে শ্রমিকদের সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করতে দেখা গেছে।

চলমান সংকট নিরসনে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলামের আহ্বানে বৈঠক করেন বেশ কয়েকটি বাগানের পঞ্চায়েত নেতারা। সেখানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয়।

আরও পড়ুন