এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ

ঘটনাটি মির্জাগঞ্জ উপজেলার চৈতা নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসার। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অধ্যক্ষ প্রায় এক বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।

চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে একটি মামলা চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে প্রায় এক বছর ধরে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সর্বশেষ অবসরে যাওয়ার ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে তুলে নিয়েছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা।

এত সব অভিযোগ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার চৈতা নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরীর বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও অভিযোগের তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়। মাদ্রাসার কাগজপত্র বলছে, ওবায়দুর রহমানের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নাইশিং গ্রামে।

সর্বশেষ কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা নুর মোহাম্মদ খান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল মালেক ৯ জুলাই কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুর রহমান ২০১২ সালের ২৮ আগস্ট চৈতা নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই কর্মস্থলে তিনি প্রায়ই অনুপস্থিত থাকতেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে প্রায় এক বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যক্ষ দীর্ঘদিন কর্মস্থলে না আসায় তাঁর বিরুদ্ধে গত ১ জানুয়ারি, ৩১ জানুয়ারি ও ২৫ মে তিনটি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো জবাব দেননি তিনি।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘পটুয়াখালী রূপালী ব্যাংক নিউটাউন শাখায় অধ্যক্ষের হিসাব নম্বরে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। এই সূত্র ধরে আমরা ঢাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, তিনি কল্যাণ তহবিলের ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬০৮ টাকা তুলে নিয়েছেন। তিনি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে গত ১ আগস্ট নিজেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখিয়েছেন এবং ওই বছরের ১১ আগস্ট বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে আবেদন করেছেন। আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া সব কাগজপত্রই ভুয়া।’

মাদ্রাসা সূত্রে আরও জানা যায়, মাদ্রাসায় সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে ছয় লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগে অধ্যক্ষ ওবায়দুরের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জজ আদালতে একটি মামলা (মামলা নং ৪১৪/২০২০) চলছে। মামলার বাদী মো. সাইদুর রহমান। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর আউলিয়াপুর গ্রামে। এ ছাড়া চাকরি দেওয়ার কথা বলে এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের উপপরিচালক মো. আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অনলাইনে আবেদন করে কল্যাণ তহবিলের ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬০৮ টাকা তুলে নিয়েছেন। পরে মাদ্রাসার সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মাধ্যমে জানতে পারি উনি সব ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করেছেন।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বিকল্প কোনো মুঠোফোন নম্বরও পাওয়া যায়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজাউল কবীর বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ওই অধ্যক্ষের অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে।