জুড়ীতে ‘বাঘ’ ভেবে চিতা বিড়ালের শাবককে খোঁচাচ্ছিল লোকজন
একদল কিশোর খেলার সময় সবজিখেতে চিতা বিড়ালের একটি বাচ্চা দেখতে পায়। তারা এটিকে ‘বাঘের বাচ্চা’ বলে মনে করে। পরে ধাওয়া করে ধরে এটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন ভিড় জমায়। তাঁদের কেউ কেউ নিরীহ বন্য প্রাণীটিকে বাঁশ দিয়ে খোঁচাতে থাকেন। খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন গিয়ে এটিকে উদ্ধার করে আনেন। গতকাল রোববার বিকেলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বরইতলি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলের দিকে একদল কিশোর বরইতলি এলাকায় সবজিখেতের পাশের জমিতে খেলাধুলা করছিল। এ সময় জমির আইল দিয়ে চিতা বিড়ালের একটি বাচ্চাকে হেঁটে যেতে দেখে তারা ‘বাঘ’, ‘বাঘ’ বলে চিৎকার শুরু করে। এটিকে ধরে আনার পর আবদুল মক্তাদীর নামের একজনের বাড়িতে বেঁধে রাখা হয়। চিতা বিড়ালটি প্রায় দুই ফুট লম্বা।
পরে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বন্য প্রাণী আটকের খবর পেয়ে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে বন বিভাগের জুড়ী রেঞ্জের স্থানীয় পুটিছড়া বিটের লোকজন ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তাঁরা দড়ি খুলে চিতা বিড়ালটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। প্রাণীটি তখন দৌড়ে পাশের একটি ঝোপে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এটিকে উদ্ধার করে রাত ১০টার দিকে পুটিছড়া সংরক্ষিত বনের ভেতর ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুটিছড়া বিটের ফরেস্টার তৌহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বরইতলি গ্রামে জুড়ী নদীর বিপরীত পাশে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। সীমান্তের ওপারে বন-জঙ্গল রয়েছে। চিতা বিড়ালটি খাবারের সন্ধানে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন প্রথমে এটিকে বাঘের বাচ্চা মনে করেছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া বন্য প্রাণীটিকে ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাণীটির তেমন আঘাত ছিল না। তাকে বেশ সুস্থ দেখাচ্ছিল। ছাড়ার পর দৌড়ে বনের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ মুনতাসিব আকাশ বলেন, বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মিশ্র চিরসবুজ বনে চিতা বিড়াল দেখা যায়। হুলো, মেছো ও চিতা বিড়াল সাধারণত একই আকারের হয়। এরা খুব বড় হয় না। চিতা বিড়াল ইঁদুর, ছোট পাখি, হাঁস, মোরগ ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এ প্রাণী মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।