শিকারপুর বন্দরে ৫ প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি, অর্ধকোটি টাকার মালামাল লুট
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর বন্দরে সোনার দোকানসহ পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাতেরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্ধকোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এ সময় ডাকাতের হামলায় পথচারীসহ আটজন আহত হয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বন্দরের উত্তর প্রান্তে লঞ্চ টার্মিনালে স্পিডবোট থেকে নামে মুখোশধারী ৩৫ থেকে ৪০ জনের একদল ডাকাত। তারা বন্দরের ভেতরে দুটি চেকপোস্ট বসিয়ে অস্ত্র নিয়ে বন্দরে ঢোকে। ২০ থেকে ২৫ জন দুটি চেকপোস্ট পাহারা দিলেও ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল বন্দরের শিকারপুর-উজিরপুর সড়কের রিয়া জুয়েলার্স, আহম্মেদ জুয়েলার্স, কণিকা জুয়েলার্স, মদিনা ফার্মেসি ও ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যালয়ের তালা ভেঙে টাকাসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এ সময় ডাকাত দল নাইট কোচের যাত্রী, নৈশ প্রহরী, বিশ্বকাপ খেলার দর্শক-ব্যবসায়ীসহ ৪০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রশি দিয়ে বেঁধে তাঁদের সর্বস্ব লুট করে। ডাকাতের হামলায় পথচারী মনির হোসেন, কালাম ব্যাপারী, সোহরাব হোসেন, মিশুকচালক বাশার ভান্ডারীসহ আটজন আহত হয়েছেন।
বন্দরের নৈশ প্রহরী সরদার মো. মন্টু বিশ্বাস বলেন, রাত সোয়া দুইটা পর্যন্ত বন্দরে টহল পুলিশ ছিল। পুলিশ চলে যাওয়ার পর আড়াইটার দিকে বাঁশি দিয়ে ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি ‘পুলিশ’ পরিচয়ে তাঁকেসহ বন্দরের ১০ নৈশ প্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। ডাকাতদের একটি দল পুরোনো পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বিশ্বকাপ খেলা দেখা দর্শকদেরও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে ঘণ্টাব্যাপী বন্দরে ডাকাতি করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সন্ধ্যা নদীর একাধিক মাছশিকারি বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক সোয়া দুইটার দিকে নদীর দক্ষিণ দিক থেকে তিনটি স্পিডবোট নিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ জনের একটি দল লঞ্চ টার্মিনালে নামে এবং প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা নদীর উত্তর দিক দিয়ে চলে যায়।
মিশুকচালক বাশার ভান্ডারি বলেন, ‘আমি নৈশ কোচের যাত্রী নিয়ে শিকারপুর বন্দরে পৌঁছালে ডাকাতেরা আমাকে মারধর করে আমার দুই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং আমার যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে।’
আহম্মেদ জুয়েলার্সের মালিক মো. জনি সরদার বলেন, প্রতিদিনের মতো কাজ শেষ করে রাত ১১টার দিকে দোকানে তালা দিয়ে বাড়িতে যান। ভোররাত চারটার দিকে ডাকাতির খবর পেয়ে বন্দরে আসেন। ডাকাতেরা তাঁর দোকান থেকে ১২০ ভরি রুপা, ২ ভরি সোনা ও ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। মদিনা ফার্মেসির মালিক মো. মাহাবুব আলম জানান, ডাকাতেরা তাঁর দোকানের তালা ভেঙে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকাসহ প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
ব্যাংক এশিয়ার শিকারপুরের এজেন্ট মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ডাকাতেরা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে তালা ভেঙে কার্যালয়ে ঢোকে। কী পরিমাণ টাকা লুট করা হয়েছে, তা জানতে চাইলে বলেন, থানার ওসি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য কাউকে জানাতে নিষেধ করেছেন।
বন্দরের অন্য ব্যবসায়ীরাও একই তথ্য জানান। তাঁরা বলেন, খবর দেওয়ার পর ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ডাকাতির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসানের বলেন, শিকারপুর বন্দরে ডাকাতি নয়, সাধারণ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলে চুরির মামলা নেওয়া হবে। ডাকাত দলের পুলিশ পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগ সঠিক নয়। এ ছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে তিনি নিষেধ করেননি বলে জানান।