সাভারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ, একজন নিহত
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় আজ রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে অজ্ঞাতনামা এক তরুণ (২৫) নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আশুলিয়ায় কয়েকটি কারখানাসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ অপরজনের নাম বিপ্লব (৪০)। তিনি বাইপাইল এলাকায় সড়কের পাশে পানি বিক্রি করেন। বিপ্লব বলেন, ‘আমি রাস্তার পাশে পানি বিক্রি করি। হঠাৎ মারামারি লাগছে। তখন একটা গুলি এসে আমার বুকে লাগে।’
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আহমেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা দেড়টার দিকে তিন-চারজন তরুণ একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাঁরা জানান, আশুলিয়ার বাইপাইলে সংঘর্ষের সময় ওই ব্যক্তির গুলি লেগেছে। এর কিছুক্ষণ পর সুযোগ বুঝে তাঁরা চলে যান। আমরা ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁর পিঠে গুলি লেগেছে। এ ছাড়া আরও একজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বেলা ১১টার দিকে আশুলিয়া থেকে আন্দোলনকারীদের কয়েকটি দল নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল। সকাল থেকে মহাসড়কের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। পরে আন্দোলনকারীরা বাইপাইল এলাকায় জড়ো হন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় পিছু হটেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাঁরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও একটি বিপণিবিতানের কাচ ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া আশপাশের কয়েক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বাইপাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ডিপোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
কারখানায় অগ্নিসংযোগ
আশুলিয়ায় হামলা, সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি কারখানা নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া দুপুরে আশুলিয়ার জিরানী এলাকায় সিনহা নিট অ্যান্ড ডেনিমস লিমিটেডে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, কয়েকটি কারখানায় বাইরে থেকে লোকজন ইটপাটকেল ছুড়লে বিভিন্ন সময়ে অনেক কারখানা ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ।
জিরাবো মডার্ন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের (ঢাকা অঞ্চল-৪) উপসহকারী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘সিনহা নিট অ্যান্ড ডেনিমস লিমিটেড কারখানায় আগুনের খবর পেলেও আন্দোলনকারীরা আমাদের সেখানে যেতে দেয়নি। আমাদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। হা–মীম গ্রুপের কারখানার ঝুটের গুদামে ও গাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমরা পৌঁছালেও বিক্ষোভকারীরা কাজ করতে দিচ্ছে না। এ ছাড়া কবিরপুরে বেক্সিমকো পিপিই ইন্ড্রাস্টিয়াল পার্কে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়েছি।’
সাভার ও আশুলিয়া প্রেসক্লাবে হামলা
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি দল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সাভার প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে সাভার মডেল থানার দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের পিছু হটিয়ে দেয়।
আশুলিয়া থানায় হামলা
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আশুলিয়া থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় থানার সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া সাভারের সিঅ্যান্ডবি বাসস্ট্যান্ডে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) ও পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মো. আব্দুল্লাহিল কাফী প্রথম আলোকে বলেন, থানায় হামলা চালাতে গেলে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। হামলাকারীরা কয়েকটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেছে।
সাংবাদিককে মারধর
বিকেল চারটার দিকে আন্দোলনের ফুটেজ নেওয়ার সময় বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজ ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সাভার প্রতিনিধি জাহিদ হাসান শাকিলকে মারধর করে তাঁকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন। কিছু দূর নেওয়ার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ধামরাইয়ের কালামপুরে সংঘর্ষ
ধামরাইয়ে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একটি ফিলিং স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।
আহত ব্যক্তিরা হলেন জাকারিয়া দিপু, মো. জামিল হোসেন, মানিক মিয়া, সেলিম হোসেন, শাজাহান ও কামরুল। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী।