রামেসু বাজারে ছেলের শেষ স্মৃতি খুঁজছেন মা ক্রাসং মারমা

ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে ছেলের স্মৃতি খুঁজে বেড়ান ক্রাসং মারমা। গত শনিবার খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজারেছবি: প্রথম আলো

রামেসু বাজারের ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে আছেন ক্রাসং মারমা। চোখে-মুখে শূন্যতা। মাত্র তিন বছর আগে স্বামী হাসু মারমা মারা গেছেন। তার পর থেকে একমাত্র ছেলে আথ্রাউ মারমাকে (২২) নিয়েই তাঁর সংসার। শরীর খারাপ থাকায় তিনি কাজ করতে পারেন না। তাই ছেলের দিনমজুরির টাকায় কোনো রকমে চলছিল সংসার। সেই ছেলে গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুলিতে মারা গেছেন এই রমেসু বাজারে। এ কারণেই হয়তো বাজারের পোড়া জিনিসপত্রের মধ্যে ছেলের উপস্থিতি অনুভব করার চেষ্টা করেন তিনি।

ঘটনার দিন সকালে বাড়ি থেকে আথ্রাউ বের হয়েছিলেন রামেসু এলাকায় কাজের খোঁজে। সেদিনই সেখানে শুরু হয় সহিংসতা। বিকেলে বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে দূরে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখে ক্রাসং ভেবেছিলেন, কোথাও হয়তো আগুন লেগেছে। কিন্তু যখন আশপাশের মানুষজন আতঙ্কে পালিয়ে যেতে শুরু করে, তখনই জানতে পারেন রামেসু বাজার এলাকায় ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছে।

সন্ধ্যায় এক প্রতিবেশী এসে ক্রাসংকে জানান, তাঁর ছেলের গায়ে গুলি লেগেছে। তাঁকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। রাতভর অপেক্ষা, অনিশ্চয়তা। কিন্তু পরদিন রাতেই হাসপাতাল থেকে ফিরল ছেলের নিথর দেহ।

‘লোকজন এখনো ভয় পায়, রামেসু বাজারে আসে না। কিন্তু আমি ভয় পাই না। আমার তো আর হারানোর কিছু নেই। আমার ছেলে এখানেই মারা গেছে। আমার মনে হয়, সে এখনো এখানেই আছে।’
ক্রাসং মারমা, গুলিতে নিহত আথ্রাউ মারমার মা।

গত শনিবার দুপুরে রামেসু বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া এক বাড়ির সামনে বসে আছেন ক্রাসং মারমা। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। কিন্তু মুখে কোনো অভিযোগ নেই। মারমা ভাষায় কথা বলেন ক্রাসং। বললেন, লোকজন এখনো ভয় পায়, রামেসু বাজারে আসে না। কিন্তু আমি ভয় পাই না। আমার তো আর হারানোর কিছু নেই। আমার ছেলে এখানেই মারা গেছে। আমার মনে হয়, সে এখনো এখানেই আছে।’

গুইমারার রমেসু বাজার থেকে এখনো ধ্বংসস্তূপ সরানো হয়নি। বাজারেও আসছেন না লোকজন। গত শনিবার তোলা
প্রথম আলো

ছেলে হত্যার বিচার চান কি না জানতে চাইলে ক্রাসং মারমা বলেন, ‘বিচার দিলেও কি ছেলে ফিরে আসবে? আমি ভগবানের কাছে বিচার দিয়েছি। তিনিই বিচার করবেন।’

রামেসু এলাকা এখনো নীরব-নিস্তব্ধ। পোড়া গন্ধ মিশে আছে বাতাসে। ভাঙা ঘরের পাশে বসে থাকা ক্রাসং মারমার চোখে প্রতিদিন ফিরে আসে সেই দিনের আগুন, আর ছেলের শেষ স্মৃতি।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধ ডাকা হয়। পরদিন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধের ডাক দেয় সংগঠনটি।

অবরোধের মধ্যেই গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে তিনজন নিহত হন।

আরও পড়ুন