২৫ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন মাইক্রোবাসের চালক নাসির উদ্দিন। ২৫ বছর পর একইভাবে সড়কে প্রাণ হারালেন তাঁর ছেলে অ্যাম্বুলেন্সচালক আল আমিন (২৭)। আজ রোববার ভোরে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী হাজীপাড়া খারুভাজ সেতুর কাছে দুর্ঘটনায় নিহত হন আল আমিন।
আল আমিনের বাড়ি নীলফামারী শহরের নিউবাবুপাড়া (কুমড়ার মোড়) মহল্লায়। প্রতিবেশীরা জানান, দুই বছর বয়সে বাবাকে হারান আল আমিন। অনেক কষ্টের পর বড় হয়ে বাবার ড্রাইভিং পেশায় যোগ দেন। সেই পেশায় নেমে বাবার মতো ছেলেও পরপারে চলে গেলেন।
এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাসির উদ্দিন পেশায় মাইক্রোবাসের চালক ছিলেন। ২৫ বছর আগে মাইক্রোবাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনি নিহত হন। একইভাবে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে তাঁর ছেলে আল আমিন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা নবজাতকসহ ডোমার উপজেলার কচুয়া চরকডাঙ্গী গ্রামের রফিকুল ইসলামও (৪০) প্রাণ হারিয়েছেন।
দুপুরে আল আমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। রংপুর থেকে তখনো বাড়িতে আল আমিনের লাশ এসে পৌঁছায়নি। তাঁর স্ত্রী লীপা বেগম (২২) স্বামীর মৃত্যুর খবরে বাড়ির উঠানে নির্বাক হয়ে বসে আছেন। সব ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। মায়ের আশপাশে থাকা অবুঝ দুই শিশু ঈমান আলী (৬) ও লাবীব মিয়া (২) বুঝতে পারছিল না বাবার চিরবিদায়ের কথা।
দুই ছেলের দিকে তাকিয়ে লীপা বেগম প্রলাপ করতে করতে বলেন, ‘মোর দুই ছেলে এলা কী হোবে, কায় ওমাক আদর করিবে? ও আল্লাহ মুই ওমাক এলা কী খাওয়াইম?’
লীপা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, আল আমিনের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয় গতকাল শনিবার রাতে। রাতে খাওয়ার পর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিলেন ‘ভাড়া নিয়ে বাইরে যাব, ফিরতে দেরি হবে।’ সেই ফেরা যে লাশ হয়ে ফিরবে, সেটা কেউ ধারণা করতে পারেনি।
আল আমিনের শাশুড়ি অমিজন বেগম বলেন, ‘ড্রাইভারি করে জামাই আল আমিন সংসার চালায়। নিজের বাড়ি নাই, থাকে ভাড়া বাড়িতে। এলা জামাই তো (আল আমিন) আর নাই, নাতি দুই টাক মানুষ করিবে কায়?’