বেগুনের ওজন এক কেজি  

অন্য অনেক জাতের চেয়ে এই বেগুনের ফলন ভালো, গুণাগুণও বেশি। আর্থিক লাভের দিক দিয়ে অন্য অনেক ফসলকে পেছনে ফেলবে বেগুনের এই জাত।

বারি-১২ জাতের একেকটি বেগুনের ওজন ৭০০ থেকে ১ কেজি ১০০ গ্রাম হয়। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে
ছবি: প্রথম আলো

বরেন্দ্রভূমিতে বারি বেগুন-১২–এর পরীক্ষামূলক আবাদে সাফল্য পাওয়া গেছে। আশাবাদী হয়ে উঠেছেন চাষি, বিজ্ঞানী ও উদ্যানতত্ত্ববিদেরা। তাঁদের মতে, অন্য অনেক জাতের চেয়ে এই বেগুনের ফলন ভালো, গুণাগুণও বেশি। আর্থিক লাভের দিক দিয়ে অন্য অনেক ফসলকে পেছনে ফেলবে বেগুনের এই জাত।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) বরেন্দ্রভূমিতে বারি বেগুন-১২ জাতের প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত দুই বছর রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় চাষিদের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে এ বেগুনের আবাদ করা হয়। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাধ্যমে হর্টিকালচার সেন্টারে আবাদ করা হয় এই বেগুন।

এ সম্পর্কে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক বিমল কুমার প্রামানিক বলেন, সেন্টারের দুই শতক জমিতে বারি বেগুন-১২–এর পরীক্ষামূলক আবাদ করা হয়। এ বেগুন সাধারণত অক্টোবরে লাগানো হয়। তবে দেরিতে অর্থাৎ ডিসেম্বরে এর আবাদ করেও চমকপ্রদ ফলাফল পাওয়া গেছে। মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকেই ভালোভাবে ফলন দিতে শুরু করে।

এখনও গাছ ফল-ফুলে ভরপুর। একেকটি বেগুনের ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ১০০ গ্রাম হচ্ছে। একেকটি গাছেই ফলন দিচ্ছে ১০-১২ কেজি। অন্যান্য জাতের বেগুনের চেয়ে এর ফলন বেশি। রোগ-বালাইও কম। সেচ দিতেও হচ্ছে কম। স্বাদেও অতুলনীয় এ বেগুন। বিচি খুবই কম। এর ভর্তা যেমন সুস্বাদু, তেমনি ভাজিসহ অন্য তরকারিতেও স্বাদ বেশ ভালো। এখন চাষি পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সামনের মৌসুমেই এর চারা বিতরণ শুরু করা হবে।

একইভাবে এই জাতের বেগুনের চাষ নিয়ে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক পলাশ সরকার। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক চাষে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলে এ বেগুন খুবই উপযোগী হবে। এখানকার জনপ্রিয় খাবারের একটি কালাইয়ের রুটির সঙ্গে বেগুন ভর্তা। বিঘাপ্রতি ফলন কমপক্ষে সাত মেট্রিক টন। একেকটি বেগুন এক কেজির ওপরে হলেও এর স্বাদ ঠিক থাকে। সামনের বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে দুই বিঘা করে জমিতে এ বেগুন চাষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাষিদের মধ্যে এই জাতের বেগুনের চারা বিতরণ করা হয়েছে। বারির সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বরেন্দ্র কেন্দ্র, রাজশাহীর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জগদীশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিদের সবজি চাষের প্রবণতা খুব কম। এ বেগুনের পরীক্ষামূলক চাষে চাষিরা ভালো ফলাফল পেয়েছেন। ক্রমেই এর চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জগদীশ চন্দ্র বর্মণ জানান, ১৫-৩০ আগস্টের মধ্যে বীজতলায় বারি বেগুন-১২–এর বীজ ফেলতে হয়। মূল জমিতে চারা লাগাতে হয় ১৫-৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। ৭০ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। বিঘাপ্রতি ফলন হয় সাত মেট্রিক টন। সার, চারা, শ্রমিক, সেচ, বালাইনাশক সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি মোট খরচ ৩০ হাজার টাকা। ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করতে পারলে বিঘাপ্রতি আয় হবে লক্ষাধিক টাকা।

গোদাগাড়ীর বসন্তপুর গ্রামের মাসাউল ইসলাম দুই বছর ধরে এ বেগুনের চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘একেকটি বেগুন এক থেকে দেড় কেজি হয়েছে। এক বেগুনের ভর্তা দিয়েই চার-পাঁচজন কালাইয়ের রুটি খেতে পেরেছি। এ বেগুন দ্রুত বড় হয়। ফলনও ভালো। আমাদের দেখাদেখি আশপাশের চাষিরাও এই বেগুন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।’