দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় বহুল প্রতীক্ষিত কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি: প্রথম আলো

বহুল প্রতীক্ষিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার বেলা একটায় এই প্রকল্প উদ্বোধন করেন তিনি। সেই সঙ্গে এই প্রকল্পের অধীন নির্মিত দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনেরও উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্প উদ্বোধনের কারণে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হলো। আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই এই রেলপথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করবে বলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানান।

প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে থাকা এই ট্রেনে চড়েই কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে রামু যাবেন প্রধানমন্ত্রী
ছবি: প্রথম আলো

আজ সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসে পৌঁছান। বেলা সাড়ে ১১টার তিনি পৌঁছান আইকনিক রেলস্টেশনে। সেখানে রাখাইন শিল্পীরা নাচ-গানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেন। এরপর পাঁচ হাজার সুধীজনের উপস্থিতিতে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির। এরপর ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী। আজ বেলা ১২টায়
ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথা দিয়েছিলাম, কথা রাখলাম। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হলো। রেল সংযোগে অন্তর্ভুক্ত হলো দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজার। তাতে আমিও আনন্দিত। মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রেললাইন নির্মাণ করার। সেই রেললাইনের উদ্বোধন হলো আজ।’

দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। এর আগে সভাপতির বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী ১ ডিসেম্বর বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে আইকনিক রেলস্টেশনের উদ্বোধন হয়। এরপর ১০১ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়াতে ২৯ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের দৃষ্টিনন্দন ছয়তলা ভবনের এই রেলস্টেশন। যেখানে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, শিশুযত্ন কেন্দ্র, পোস্ট অফিস, কনভেনশন সেন্টার, ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, প্রার্থনার স্থান, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজ করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণের বিপরীতে খরচ হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা।

আইকনিক রেলস্টেশনে রাখাইন শিল্পীদের একটি দল নাচ–গানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান
ছবি: প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইকনিক রেলস্টেশন ও রেলপথ প্রকল্প উদ্বোধন শেষে ট্রেনে চড়ে ২২ কিলোমিটার দূরের রামু স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখান থেকে রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন হয়ে হেলিকপ্টারে যাবেন জেলার সাগরদ্বীপ মাতারবাড়ী। বিকেলে সেখানে দলীয় জনসভায় ভাষণ দিয়ে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে শহরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। তিন দিন ধরে আইকনিক রেলস্টেশন ও রেলপথ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেখানে সর্বসাধারণের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়। তারপরও প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার জন্য আইকনিক রেলস্টেশন এবং রামু পর্যন্ত রেলপথের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছেন হাজারো নারী, পুরুষ ও শিশুকিশোর।

১৫ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

কক্সবাজার –দোহাজারী রেললাইন প্রকল্প ও আইকনিক রেলস্টেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ বেলা সাড়ে ১২টায়
ছবি: প্রথম আলো

আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ৮৮ হাজার কোটি টাকা।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত সেতু, সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ, উখিয়ার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, রামু উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, চকরিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনালের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, কুতুবদিয়া ঠান্ডা চৌকিদারপাড়া আর সি সি গার্ডার ব্রিজ, মহেশখালীর গোরকঘাটা-শাপলাপুরের জনতাবাজার সড়ক, বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমি ভরাট, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, ঈদগাঁও জাহানারা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মহেশখালীর ইউনুছখালীর উচ্চবিদ্যালয়, উখিয়ার রত্না ও মরিচ্যা পালং উচ্চবিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন উদ্বোধন।

এ ছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলের টার্মিনাল, টেকনাফের মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর জোয়ারিয়ানালার নন্দাখালী সড়কে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ প্রকল্পের।