মার্কেটের অন্তত ১০ ব্যবসায়ী বলেন, মতলেব মাতুব্বর দলবলসহ সন্ত্রাসীদের নিয়ে আজ সকালে মার্কেটে এসে ব্যবসায়ীদের গালিগালাজ, দোকান ভাঙচুর, জীবননাশসহ দোকানে তালা দেওয়ার চেষ্টা চালান। সন্ত্রাসীদের ভয়ে ব্যবসায়ীরা ভাড়া দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি মতলেব মাতুব্বর তাঁর সহযোগীদের নিয়ে চলে যাওয়ার আগে বলেন, বেলা দুইটার মধ্যে সব ব্যবসায়ীর ভাড়া তুলে আওয়ামী লীগ অফিসে পৌঁছে দিতে হবে। পরে আক্কেল আলী মার্কেটের ব্যবসায়ী সেরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মো. ইলিয়াস হোসেন, আবদুল জলিল, মো. সোহেল ও মো. আলম নেতৃত্ব দিয়ে ভাড়া তুলে বেলা দুইটার আগেই আওয়ামী লীগ অফিসে মতলেব মাতুব্বরের কাছে সব দোকানের ভাড়ার টাকা পৌঁছে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দেশে আইনকানুন কিছু নেই। মার্কেটের মালিক আক্কেল আলী। পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে আক্কেল আলীকে ভাড়া দিয়ে আসছি। এখন নেতাদের হুমকি ও আমাদের নিরাপত্তার জন্য মতলেব মাতুব্বরকে ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা অল্পসাধে মার্কেটের মালিককে বাদ দিয়ে নেতার কাছে ভাড়া দিই নাই। না দিলে জীবন নিয়ে মার্কেটে ব্যবসা করতে পারব না। তাই বাধ্য হয়েই ভাড়া দিছি।’

এর আগে গতকাল সকালে মতলেব মাতুব্বরের কাছে ভাড়া পরিশোধ করেছেন আক্কেল আলী মার্কেটের টাইলস ব্যবসায়ী আহাদ নাইয়া ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বাবুল পালোয়ান। ভাড়া পরিশোধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আহাদ নাইয়া বলেন, ‘আক্কেলের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। ছয় মাস আগে আমি আক্কেল আলীর কাছ থেকে দোকান ভাড়া নিছি, তাঁকে ভাড়া পরিশোধ করছি কিন্তু বর্তমানে ঝামেলা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতার কাছে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিছি ভাড়া না দিলে যদি কোন সমস্যায় পড়ি তাই ভাড়া দিছি।’

বাবুল পালোয়ান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ফেব্রুয়ারিতে ভাড়া নিতে এলে এত দিন ভাড়া দিইনি কিন্তু আবার দোকান বন্ধের হুমকি দেওয়ায় ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য তাঁকে ভাড়া পরিশোধ করেছি।’

বিএনপিকর্মী মার্কেটের মালিক আক্কেল আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা মতলেবের দেওয়া আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পর থেকে ভাড়া পরিশোধে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। গতকাল দুজন ভাড়া দেন। কিন্তু আজ সকালে আওয়ামী লীগ নেতা মতলেব মাতুব্বর সন্ত্রাসীদের নিয়ে মার্কেটে ঢুকে ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে জীবননাশের ভয়ভীতি দেখানোর পরে ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগ নেতাকে ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন। আমার মার্কেটের ফেব্রুয়ারি মাসের ভাড়া প্রায় ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। দেশটা মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো বিচার পাইনি।’

বাকাইবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও গৌরনদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য প্রদীপ কুমারদের কাছে ভাড়া আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা দেওয়ার সময় আমি ছিলাম না, তবে শুনেছি ব্যবসায়ীরা সবাই ভাড়া পরিশোধ করেছেন।’

তবে মো. মতলেব মাতুব্বর বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে আমার কাছে ভাড়া দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। মহড়া ও হুমকি দিয়ে ভাড়া দিতে বাধ্য করার অভিযোগ সঠিক নয়।’