সুনামগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে লুকোচুরি ও অনিয়মের প্রতিবাদ 

বক্তারা বলেন, শুধু কর্মচারী নন, শিক্ষকদের নিয়োগ পরীক্ষাও ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় সুনামগঞ্জে অথচ নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে গাজীপুরে। 

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনেছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে লুকোচুরি ও অনিয়মের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার মানববন্ধন হয়েছে। সচেতন সুনামগঞ্জবাসীর ব্যানারে সকালে শহরের জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজন অংশ নেন।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি রোকেস লেইস, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেরেনূর আলী, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক রুহুল তুহিন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) বোরহান উদ্দিন দোলন, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এনাম আহমেদ প্রমুখ।

মানববন্ধনে জানানো হয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও কম্পিউটার অপারেটর পদে লোক নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবেদনকারীদের গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) গিয়ে ১৯ জানুয়ারি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাজীপুরের পরীক্ষা সুনামগঞ্জে স্থানান্তর করেন। গত শুক্রবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার একটি কলেজে এসব পদের লিখিত পরীক্ষা হয়েছে। ওই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি আবার ডুয়েটে ডাকা হয়েছে। 

বক্তারা বলেন, শুধু কর্মচারী নন, শিক্ষকদের নিয়োগ পরীক্ষাও ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় সুনামগঞ্জে অথচ নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে ঢাকায়, গাজীপুরে। এটা অনিয়ম।

মানববন্ধনে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি রোকেস লেইস বলেন, ‘শুরুতেই এত বিতর্ক, লুকোচুরি কেন বুঝতে পারছি না। উপাচার্য শান্তিগঞ্জে অফিস নিয়েছেন। সেখানে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু তিনি ঢাকাতেই সবকিছু করছেন। এটা নিয়ম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ পরীক্ষা সুনামগঞ্জেই নিতে হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবু নঈম শেখ বলেছেন, অনেকেই না বুঝে এসব নিয়ে সমালোচনা করছেন। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটির নিয়োগ পরীক্ষা ঢাকায় হচ্ছে। গাজীপুরে একটি ল্যাব পাওয়া গেছে, যেখানে কম্পিউটার অপারেটরের ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে। এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা থাকেন। তাঁদের সুনামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া কঠিন। কারণ, সেখানে তাঁদের রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। অধ্যাপকদের রাখারও কোনো ব্যবস্থা নেই।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সিপিবির সভাপতি এনাম আহমদ বলেন, সুনামগঞ্জে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে। ল্যাবের অজুহাত দিয়ে ঢাকায় পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। হাওর এলাকার দরিদ্র চাকরিপ্রার্থীরা চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে গাজীপুরে কেন যাবে? এখানে অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে। হাওরবাসীর কাঙ্ক্ষিত এই প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে সুনামগঞ্জের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

প্রশাসনিক সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল ২০২০ সালের ২ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়। এরপর সংসদে এই বিল উত্থাপন হয় একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর। এরপর ১৮ নভেম্বর সংসদে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আইন পাস হয়। জেলার সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের আহসানমারা সেতুর পূর্ব পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই জমিতে এখনো কোনো অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। শান্তিগঞ্জ উপজেলায় একটি ভাড়া করা ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে।