যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে তাহিরপুর থানায় ৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার মামলাটি করেছেন উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও (পুরান ঘাট) গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন আরিফ তালুকদার নামের এক ব্যক্তি।
মামলার বিষয়টি তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী আরিফ নদীর যাদুকাটা-১ বালুমহালের ইজারাদার মো. নাছির মিয়ার আত্মীয় এবং মহাল দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
মামলার এজাহারে থাকা আসামিদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে বাসিন্দাদের ভাষ্য, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বিএনপির স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মীর নামও আলোচনায় আছে। কিন্তু মামলার আসামির তালিকায় তাঁদের নাম দেখা যায়নি।
ওসি দেলোয়ার হোসেন মঙ্গলবার বিকেলে নদীতীরের লাউড়েরগড় এলাকায় যাদুকাটা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তলন ও লুট নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে ওসি বালু লুটের হোতা হিসেবে লাউড়েরগড় গ্রামের বাসিন্দা লাউড়েরগড় আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল কাইয়ুম ওরফে খেলু মাস্টার ও একই গ্রামের খাজা মাইনুদ্দিনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। এই দুজনকে নদীর তীরে পেলেই গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছিলেন ওসি। মামলায় এই দুজনকেও আসামি করা হয়েছে।
খাজা মাইনুদ্দিন স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। আবদুল কাইয়ুম স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তবে আবদুল কাইয়ুম তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ৯ অক্টোবর ভোর ৫টা থেকে ১১ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত আসামিরা নৌকা, বাল্কহেড ইত্যাদি নিয়ে নদীতে জড়ো হন। পরে নদীর ইজারা সীমানার বাইরে লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পাড় থেকে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যান। তাঁদের বাধা দিলেও কোনো কাজ হয়নি। আসামিরা এখনো বালু তুলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।
যাদুকাটা নদীর বালু উত্তোলন নিয়ে চলতি মাসের শুরু থেকেই অস্থিরতা চলছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ইজারাদার পক্ষের যোগসাজশ আছে বলেও অভিযোগ আছে। সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় দুটি বালুমহাল তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে অবস্থিত। মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় গত পাঁচ মাস এই দুটি বালুমহালে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকার পর চলতি মাস থেকে আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই নদীর সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় ইজারা সীমানার বাইরে গিয়ে একটি পক্ষ জোর করে বালু উত্তোলন করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের ফলে আশপাশের গ্রামসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এ দুটি বালুমহাল এবার জেলা প্রশাসন থেকে প্রায় ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়। কিন্তু মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় ইজারাদারকের মহাল বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। চলতি মাসে প্রশাসন ইজারাদারদের মহাল দুটি বুঝিয়ে দেয়।