ইউরোপে রপ্তানির জন্য সবজির প্রথম চালান জাজিরা থেকে ঢাকায়

জাজিরায় উৎপাদিত সবজি সুইজারল্যান্ডে পাঠাতে কাঁচা মরিচ বাছাই ও প্যাকেটিং করছেন কৃষকেরা। মঙ্গলবার বিকেলে জাজিরার মিরাশার চাষিবাজারে
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের জাজিরায় উৎপাদিত সবজি ইউরোপে রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে জাজিরার মিরাশার চাষিবাজার থেকে সবজির প্রথম চালান ঢাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল প্যাকেজিং হাউসের উদ্দেশে পাঠানো হয়। সরকারি রপ্তানি নিয়ম সম্পন্ন করে কাল বুধবার বিমানযোগে সুইজারল্যান্ডে পাঠাবে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

বিএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম কল্লোল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাজিরায় উৎপাদিত কচু, কাঁচা মরিচ ও লাউ এ মুহূর্তে রপ্তানির জন্য মানসম্পন্ন। আমরা আপাতত একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সবজি সুইজারল্যান্ডে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, শিগগির পুরোদমে জাজিরার সব ধরনের সবজি ইউরোপে রপ্তানি শুরু করতে পারব।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরে ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য আবাদ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয় জাজিরা উপজেলায়। জাজিরার ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, করলা, শসা, কাঁচা মরিচ, আলু, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, কচু, শিম, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি উল্লেখযোগ্য। জাজিরা থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর জাজিরার সবজির চাহিদা বেড়ে গেছে।

সূত্র জানায়, ২৯ ডিসেম্বর জাজিরায় নিরাপদ সবজি ও ফল রপ্তানিবিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও রপ্তানিকারকেরা ইউরোপে সবজি রপ্তানির ঘোষণা দিয়েছিলেন। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল জাজিরার মিরাশার চাষিবাজার থেকে লাউ, কাঁচা মরিচ ও কচুর একটি চালান সুইজারল্যান্ডে পাঠানোর আগ্রহ দেখিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে সহায়তা চান। ওই প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের কাছ থেকে ৬৫ কেজি কাঁচা মরিচ, ৬৫টি কচু ও ২০টি লাউ সংগ্রহ করেন।

আজ বিকেলে সবজিগুলো স্থানীয়ভাবে মোড়কজাত করে ঢাকার শ্যামপুরে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল প্যাকেজিং হাউসে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষা করে রপ্তানি উপযোগী প্যাকেজিং করা হবে। এরপর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং থেকে সনদ দেওয়ার পর কাল সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হবে। সন্ধ্যার ফ্লাইটে তা সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হবে।

জাজিরার বিলাশপুর মুলাই ব্যাপারীকান্দি গ্রামের কৃষক বেলায়েত হোসেন এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন। বেলায়েতের খেতে উৎপাদিত ১ কেজি আকারের লাউ সুইজারল্যান্ড পাঠানো হয়েছে। বেলায়েত প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩০ বছর ধরে লাউ আবাদ করি। কখনো লাভ করেছি আবার কখনো লোকসানে পড়েছি। কিন্তু আজ অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে। আমার জমির লাউ ইউরোপের বাজারে পাঠানো হয়েছে। আমি আনন্দিত, অভিভূত।’

আরও পড়ুন

নাওডোবার কচুচাষি রিপন ফকির বলেন, দুই বিঘা জমিতে কচুর চাষ করেছেন। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন। আজ সেই কচু গেছে বিদেশে। ভালো দামও পেয়েছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিকারকেরা যে পণ্যগুলো নিচ্ছেন বা নেবেন, স্থানীয় বাজারের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি দাম কৃষককে দেওয়া হবে। এতে কৃষক লাভবান হবেন। ইউরোপে যে সবজির চাহিদা আছে, জাজিরায় তা উৎপাদন হয়। জাজিরার লাউ, জালি কুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল, পটোল, মিষ্টিকুমড়া, কচু, কাঁচা মরিচ, শিম, পেঁপে, লতি, ঢ্যাঁড়স, বরবটিসহ বিভিন্ন ধরনের শাক নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে চাহিদাপত্র দিয়েছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।

জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। এ অঞ্চলে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। জাজিরার সবজি ইউরোপে যাত্রার মধ্য দিয়ে আরেকটি সফলতা যুক্ত হলো। পুরো শরীয়তপুরের কৃষিপণ্য রপ্তানি করে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবেন তাঁরা। এ জন্য রপ্তানিযোগ্য ফসল উৎপাদনে কৃষককে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেওয়া হবে।