‘মা সংসারটাকে আগলে রাখতেন, এখন কাকে মা ডাকব’
‘মা সংসারটাকে আগলে রাখতেন। সবার জন্য ভাবতেন। আমরা বড় হয়েছি, তারপরও কোথাও যাওয়ার সময় মাকে না বলে যেতাম না। বাড়িতে ঢুকেই আগে মাকে ডাকতাম। মা পরপারে চলে গেছেন, এখন কাকে মা ডাকব?’
কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোজিনা বেগমের (৫০) ছোট ছেলে রইসুল ইসলাম। রোজিনা উপজেলার পশ্চিম বেলকা গ্রামের কাঠমিস্ত্রি আবুল হোসেনের স্ত্রী। গত শনিবার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পশ্চিম বেলকা গ্রামে বাড়ির উঠানে মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে রোজিনার ছোট ছেলে রইসুলের সঙ্গে প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের কথা হয়। এ সময় পাশেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বড় ছেলে রুবেল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মায়ের ভালোভাবে চিকিৎসা হয়নি। হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ দেয়নি। সবকিছু বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।’
রোজিনা বেগমের চার মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে রুবেল মিয়া (২৭) ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। ছোট ছেলে রইসুল ইসলাম (২২) স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। দুই ছেলে ও আবুল হোসেনের আয়ের ওপর নির্ভর করেই চলে তাঁদের সংসার। ১০ শতক জমিতে টিনশেড ঘরে বসবাস করতেন তাঁরা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোজিনার তিনটি ছাগল ছিল। এর মধ্যে একটি ছোট ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ওই ছাগলটি জবাই করার সময় তাঁর হাতের আঙুলে ক্ষত হয়। এর পর থেকেই তাঁর শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, রোজিনার শরীরে অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ ছিল। খুব খারাপ অবস্থায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। হৃদ্রোগ ও ফুসফুসে জটিলতা ছাড়াও রক্তচাপ কমে গিয়েছিল, শ্বাসকষ্ট ছিল। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েই তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তিনি মারা যান।