ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকসভা শেষে মারামারি, ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ কর্মী আহত

কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকসভা শেষে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকসভা শেষে ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে এক কর্মী আরেক কর্মীকে ছুরিকাঘাত করে আহত করেন। আজ রোববার বেলা আড়াইটার দিকে ক্যাম্পাসে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের পাশে আমবাগানে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ছাত্রলীগ কর্মী মুফতাইন আহমেদ সাবিক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাঁ হাতে ছুরিকাঘাত করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখা কমিটির সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের অনুসারী কর্মী। এ ঘটনার পর নেতা-কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ঘটনার হট্টগোলের একাধিক ভিডিও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে চলে আসে। ওই ভিডিওতে ঘটনাস্থলে মাটিতে ফেলে কয়েকজনকে কিলঘুষি মারতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদৎ হোসেন আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুষ্ঠান শেষ করে অতিথিরা উপাচার্যের বাংলোতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় জানতে পারি আমবাগানে এক ছাত্র আরেক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করেছে। দ্রুত সেখানে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের পাঠানো হয়। আহত ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। তার হাতে কোনো সেলাই পড়েনি। তবে ঘটনাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে অভিযোগ না পেলেও পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকসভা শেষে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির সময় ছুরিকাঘাতে আহত ছাত্র মুফতাইন আহমেদ
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের আয়োজনে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাই। বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন উপাচার্য আবদুস সালাম।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, আলোচনা সভা চলাকালে মিলনায়তনে ঢুকতে গিয়ে কথা-কাটাকাটি হয় আইন বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষ ও জিয়া হলের শিক্ষার্থী শামীম ও শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থী ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের আশিক কোরাইশির মধ্যে। বেলা দুইটার দিকে আলোচনা সভা শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা গাড়িবহর নিয়ে ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাংলোতে যান। পরে সকালের ঘটনার জের ধরে অতিথিরা বের হওয়ার পরেই মিলনায়তনের পাশে আমবাগানে হট্টগোল দেখা দেয়।

একপর্যায়ে জিয়া হল ও রাসেল হলের ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় প্রতিপক্ষ মুফতাইন আহমেদ সাবিকের হাতে ছুরিকাঘাত করা হয়। ব্যবস্থাপনা বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের আকিব তাঁকে ছুরিকাঘাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে সাবিক ছুরিকাঘাতের বিষয়টি গোপন করছেন। যদিও ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ছুরিকাঘাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে সাবিক বলেন, ‘কিছুসংখ্যক ছেলে মারামারি করতেছিল। এ সময় আমি তাদের ঠেকাতে গিয়ে আমগাছের ডাল লেগে কেটে গেছে। আমি এর বেশি আর বলতে চাচ্ছি না।’

এদিকে আকিব ছাত্রলীগ কর্মী সাবিককে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে নিজেও মার খেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন,‘আলোচনা সভা শেষে বাইরে দেখি হুলুস্থুল অবস্থা বিরাজ করছে। পরে রাসেল হলের ছেলেরা আমাকেও মারধর করে। আমার হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই সময় আমার জামাকাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়।’ তিনি ছুরিকাঘাতের বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন,‘আলোচনা সভা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এরপর যে ঘটনাটি ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননূন যায়েদ বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ না পেলে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব না। ক্যাম্পাসের বিষয়ে প্রক্টর কিছু না করলে কোনো কিছু করা সম্ভব না।