সুন্দরবনে ২৫ কেজি হরিণের মাংসসহ ৫ শিকারি গ্রেপ্তার
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ থেকে ২৫ কেজি হরিণের মাংসসহ পাঁচ শিকারিকে গ্রেপ্তার করেছে কোস্টগার্ড। আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবিত মাহমুদ।
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে খুলনার নলিয়ান কোস্টগার্ডের সদস্যরা সুন্দরবনের শিবসা নদীসংলগ্ন মরা লক্ষ্মী খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে আটক করে। পরে তাঁদের বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই ঘটনায় বন আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন খুলনার কয়রা উপজেলার বাসিন্দা ইমরান গাজী (২৪), আবদুর রহিম (৪৩), রোকন উজ জামান (৩৫), আবু মুসা (৩৬) ও মো. মামুন (৩৫)।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মাহবুব হোসেন জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা জানতে পারেন, সুন্দরবন থেকে চোরা শিকারিরা হরিণ শিকার করে ফিরছেন। গতকাল বিকেল চারটার দিকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা অভিযানে নামেন। তাঁরা গহিন সুন্দরবনের শিবসা নদী ধরে এগিয়ে মরা লক্ষ্মী খাল এলাকায় একটি নৌকা তল্লাশি করেন। ওই নৌকার ভেতরে হরিণের ২৫ কেজি মাংস ও ৮০টি শিকারের ফাঁদ দেখতে পান। তখন নৌকায় থাকা পাঁচজন শিকারিকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হরিণ শিকারের কথা শিকার করেছেন।
বন বিভাগের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন এলাকা থেকে ৪১১ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। এতে মামলা হয়েছে ৩০টি, আসামি হয়েছেন ৭২ জন। ৬ মার্চ কয়রার হুদুবুনিয়া গ্রাম থেকে আট কেজি হরিণের মাংসসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কয়রা থানা-পুলিশ। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৬২ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেছে কোস্টগার্ড ও বন বিভাগ।
সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনে যাঁরা হরিণ শিকার করেন, তাঁরা জেলের ছদ্মবেশে সুন্দরবনে ঢুকে দড়ির একধরনের ফাঁদ হরিণের নিয়মিত যাতায়াতের পথে পেতে রাখেন। চলাচলের সময় হরিণ সেই ফাঁদে আটকে যায়। এরপর বনরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণ জবাই করে বনের ভেতর থেকেই মাংস কেটে লোকালয়ে এনে তা বিক্রি করা হয়।
চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন এলাকা থেকে ৪১১ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। এতে মামলা হয়েছে ৩০টি, আসামি হয়েছেন ৭২ জন।
বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাবিত মাহমুদ বলেন, ‘গতকাল রাতে আসামিরা আমাদের জিম্মায় ছিলেন। আজ সকালে তাঁদের আদালতে পাঠানো হবে। আদালতের অনুমতি নিয়ে হরিণের জব্দ মাংস বিনষ্ট করা হবে।’
চোরা শিকার বন্ধে বন বিভাগের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘আমরা বন্য প্রাণী শিকারে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্যদাতাকে পুরস্কার দিচ্ছি। এতে আগের তুলনায় বন্য প্রাণী শিকার কমেছে। তবে শিকার ও পাচারের লাগাম টানতে হলে আমাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’