মামলা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, শরিফুজ্জামান রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার এক নারী বাসিন্দাকে বোন বানান। পরে প্রতারণার মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই নারীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ছবি তোলেন, ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করেন। গত বছরের ২১ অক্টোবর ওই নারী বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে শরিফুজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ২৫ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। এর পর থেকে শরিফুজ্জামান কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। পরে তাঁকে রাজধানীর রমনা থানার ২০২১ সালের ২৭ মে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা এবং ২০২২ সালে পিরোজপুরে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১২ মার্চ পিরোজপুর আদালতে মামলার হাজিরা ছিল তাঁর। হাজিরার পরের দিন তাঁকে পিরোজপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শরিফ মনি নামের ফেসবুক আইডিতে তিনটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ছবি একটি ভবনের ভেতরে এবং অন্যটি গাড়িতে বসে তোলা। পরনে একই পোশাক। এসব ছবির বিষয়ে তাঁর স্বজনদের ভাষ্য, কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে পিরোজপুর কারাগারে আনা–নেওয়ার পথে ছবিগুলো তোলা হয়েছে। গাড়িতে ও তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে শরিফুজ্জামান ছবিগুলো তুলেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, ৮ মার্চ পিরোজপুর কারাগারে শরিফুজ্জামানকে নেওয়ার পথে দুপুরে তাঁকে বহন করা মাইক্রোবাসটি পাঁচপাড়া বাজারে থামে। এরপর তিনি পাঁচপাড়া বাজারে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যান। সেখানে তিনি দুপুরের খাবার খান ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁকে পিরোজপুর কারাগারে নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাঁচপাড়া বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, শরিফুজ্জামান পাঁচপাড়া বাজারে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পরিবার ও স্থানীয় পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটান, দুপুরের খাবার খান।
এ ব্যাপারে শরিফুজ্জামানের বড় ভাই লিটন শিকদার দাবি করেন, ওই ছবি আমি শরিফুজ্জামানের আইডিতে পোস্ট করেছি। ছবি কবের তোলা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক আগে তোলা। তবে যাঁরা শরিফুজ্জামানকে ওই দিন বাজারে দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চিত করেছেন, ফেসবুকে পোস্ট করা ছবির পোশাকেই তিনি ছিলেন।
পিরোজপুর জেলা কারাগারের জেল সুপারের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার কফিল উদ্দিন মাহমুদ বলেন, শরিফুজ্জামানকে ৮ মার্চ সন্ধ্যায় পিরোজপুর কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৩ মার্চ সকালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁকে আনা-নেওয়ার পথে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কাছে তথ্য নেই। শরিফুজ্জামানকে আনা-নেওয়ার দায়িত্বে কয়জন পুলিশ ছিলেন এবং তাদের নাম-পদবি জানতে চাইলে তিনি তাঁর তথ্য না থাকার কথা জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেছেন, শরিফুজ্জামানের সঙ্গে দুজন পুলিশ ছিলেন। তাঁকে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে পিরোজপুরে আনা-নেওয়া করা হয়েছে।