সিরাজগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান বললেন, গণতন্ত্র এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বুধবার বিকেলে শহরের ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যই ফ্যাসিবাদের পতন চেয়েছি। আশা করছি, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।’

আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বারবার এ দেশে গণতন্ত্র হরণ হয়েছে। কিন্তু লড়াই–সংগ্রাম করে বারবার এ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে বিএনপি। ঠিক তেমনি এবারের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এই কয়েক দিনে হয়নি। ১৬-১৭টি বছর বাংলাদেশের জনগণ কী অপরিসীম ত্যাগ শিকার করেছেন। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আপনাদের জীবন ধারণ করতে হয়েছে। কত মানুষ গুম হয়েছেন। কত মানুষ খুন হয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টে পরিবর্তন হলো। সেই পরিবর্তনে স্বৈরাচার পালিয়ে গেল। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল, স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেই স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। জনগণের শাসন এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়নি।’

যারা বলে বিএনপি সংস্কার চায় না, তারা মিথ্যা কথা বলছে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি সবার চেয়ে বেশি সংস্কার চায়। আমাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ভিশন টোয়েন্টি থার্টি ঘোষণা করেছিলেন। এটি একটি সংস্কার প্রস্তাব। সেটাকে আরও সমৃদ্ধ করে আন্দোলনরত অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের নেতা তারেক রহমান ৩১ দফার রাষ্ট্রীয় কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। বিএনপির ৩১ দফাই হচ্ছে সংস্কার প্রস্তাব। আমরা বলেছি, যিনি যখনই ক্ষমতায় থাকেন, এই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবেন। আর যদি আমরা সুযোগ পাই, তবে অবশ্যই বাস্তবায়ন করব।’

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সমাবেশে নেতা–কর্মীদের ঢল। বুধবার বিকেলে শহরের ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ দেশের মানুষ বারবার পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছেন। কিন্তু বারবার তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে। একাত্তরে আমাদের দেশের লাখো মানুষ তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, মা–বোনেরা তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। যে গণতন্ত্রের জন্য, যে সাম্যের জন্য, যে মানবিক মর্যাদার জন্য, আমরা তাঁদের সেসব দিতে পারিনি। মাত্র তিন-সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাঁদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। পঁচাত্তরের জানুয়ারিতে আইন করে এ দেশে একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করা হয়েছিল। মানুষ খুব কষ্ট পেয়েছে, “যাঁদেরকে বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিলাম, যাঁদেরকে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছিল না, আমরা লড়াই করে ক্ষমতায় বসালাম, আর তাঁরা আমাদের সঙ্গে এই বেইমানি করল!” খুব কষ্ট ছিল মানুষের।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা জোর করে সেখানে বসেননি। আমরাই তাঁদের সেখানে বসিয়েছি মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য। মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। মানুষ যাতে ন্যায্যমূল্যে দ্রব্যাদি কিনতে পারেন। আবার কৃষক যাতে তাঁর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পান। আমরা চাই, বাংলাদেশে পুনরায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করুক। এটা ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপার না। এটা দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপার।’

সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম খান। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম আকবর আলী, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, জেলা বিএনপি সহসভাপতি নাজমুল হাসান, অমর কৃষ্ণ দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর কায়েম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।