খাইরুল হত্যার বিচার না পেলে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি সংসদ সদস্য ওদুদের

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক যুবলীগ নেতা খাইরুল আলম ওরফে জেম
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক যুবলীগ নেতা খাইরুল আলম ওরফে জেম হত্যার বিচার না পেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে পদত্যাগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদ। এ সময় তিনি ১০ কার্যদিবসের মধ্যে খাইরুল হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া না হলে শিবগঞ্জ-রাজশাহী সড়ক অবরোধসহ তিনি বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার কল্যাণপুর মহল্লায় রোববার বিকেলে পৌর কাউন্সিলর ইফতিখার আহমেদ আয়োজিত খাইরুল আলমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ইফতার, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে আবদুল ওদুদ এসব কথা বলেন। ওই সভায় দেওয়া বক্তব্য নিজের ফেসবুক আইডি থেকে প্রচার করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মনিরুল ইসলামও। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জামাল আবদুল নাসের, ক্রীড়া সম্পাদক আজমল হাসান, জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গত বছর ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উদয়ন মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের সাবেক সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল আলম (৪৮)। তাঁর বাড়ি শিবগঞ্জ পৌরসভার মর্দনা গ্রামে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বসবাস করতেন।

এ ঘটনায় ওই বছরের ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান, গত সংসদ সদস্য পদে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হক ওরফে লিটনসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত খাইরুলের ভাই মনিরুল ইসলাম। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়িও। আসামিরা আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এ হত্যাকাণ্ডে পৌর মেয়রের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। খাইরুল সংসদ সদস্য ওদুদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক যুবলীগ নেতা খাইরুল আলম ওরফে জেমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ইফতার, দোয়া মহফিল ও আলোচনা সভা। রোববার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার কল্যানপুর মহল্লায়
ছবি: সংগৃহীত

আবদুল ওদুদ বলেন, প্রকাশ্যে কুপিয়ে জেম (খাইরুল আলম) হত্যার এক বছর হয়ে গেল। এ মামলা যেন দীর্ঘায়িত হয়, সে জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র যদি দ্রুত দেওয়া না হয় এবং তা নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, কোনো আসামির যদি নাম বাদ দেওয়া হয়, তবে আগামী ঈদের পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেকোনো দিন বা যেকোনো সময় মানববন্ধন করা হবে। প্রয়োজনে অনশন করা হবে। তারপরও যদি না হয়, তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-শিবগঞ্জ সড়ক অবরোধ করা হবে। তারপরও যদি না হয়, তবে সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।

এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে যে বা যেসব কর্মকর্তা জড়িত থাকবে, যত বড় কর্মকর্তাই হোক না কেন, জনতার রায়ে তাঁদের বিচার হবেই হবে। পুলিশ ভাইদেরকে বলি, আপনারা অন্যায়কে সাপোর্ট (সমর্থন) দিবেন না। একজনের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কিত করবেন না।’

এ সময় হুঁশিয়ারি দিয়ে আবদুল ওদুদ আরও বলেন, ‘আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে যদি জেম (খাইরুল আলম) হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়া না হয়, তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাবা হত্যার বিচার চান, আমিও আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। জেম হত্যার বিচার না পেলে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংসদ থেকে পদত্যাগ ঘোষণা করব।’

খাইরুল আলম সম্পর্কে সংসদ সদস্য জানান, তাঁর একটি প্রতিবাদী স্বভাব ছিল। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ করতেন। তাঁর এলাকায় কোনো গন্ডগোল হলেই তাঁকে এক নম্বর আসামি করা হতো। শুধু একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ক্ষোভ, রাগ লালন-পালনের জন্য তাঁকে এক নম্বর আসামি করা হতো। মামলায় জড়ানো হতো। সর্বোপরি তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে না পেরে তাঁকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে।
আবদুল ওদুদ বলেন, ‘আমার কাছে এ মামলায় আসামিদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি আছে। যেখানে আসামিরা স্বীকার করেছে, “আমরা জেমকে মারার জন্য মাননীয় মেয়র (চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র) মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে চার দিন বৈঠক করেছি এবং হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিকল্পনা মোতাবেক তাঁকে হত্যা করি। জেমকে হত্যার পরে গোদাগাড়ী পালিয়ে যাই। সেখান থেকে মেয়রকে ফোন করলে তিনি বলেন, তোমরা গা ঢাকা দাও, যা হবার হয়ে গেছে। তোমরা দূরে পালিয়ে যাও। নুরুল ডিআইজি ভাই তোমাদের দেখভাল করবে।”’

জেম হত্যা মামলা প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সপ্তাহখানেক আগে পুলিশের সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেওয়া হয়েছে। তবে মামলার নথিপত্র এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। মামলার তদন্তে অনেক অগ্রগতিও আছে।