কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারডুবির ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাগর থেকে আরও ১৪ রোহিঙ্গা নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। গভীর সাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে বাহারছড়া সৈকতের শীলখালী এলাকায় নিয়ে আসেন স্থানীয় জেলেরা।
এদিকে একই সময় জোয়ারের পানিতে বাহারছড়া সৈকতে ভেসে এসেছেন তিন তরুণীর লাশ। তাঁরা ট্রলারডুবির ঘটনায় মারা যাওয়া রোহিঙ্গা নাগরিক বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে গতকাল সোমবার মধ্যরাতে টেকনাফ সাগর উপকূলে রোহিঙ্গা নাগরিকদের বহনকারী একটি ট্রলার ডুবে যায়। ওই ট্রলারে থাকা ৩১ জন আজ সকালে সাঁতার কেটে টেকনাফের বাহারছড়া সৈকতে ফেরেন। পরে পুলিশ ও কোস্টগার্ড বাহিনী তাঁদের হেফাজতে নিয়েছে। ট্রলারডুবির ঘটনায় আজ দুপুর পর্যন্ত ৪৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আটজন নারী।
টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ি তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল সাতটার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের বাইন্যাপাড়া ও হলবনিয়া সমুদ্রসৈকত দিয়ে গ্রামে আসেন ৩১ রোহিঙ্গা। তাঁদের মধ্যে দুই নারীও ছিলেন। সাঁতরে তাঁরা কূলে উঠে আসতে সক্ষম হন বলে জানা গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ আরও বলেন, দুপুরে বাহারছড়া ইউনিয়নে মাথাভাঙ্গা সৈকত এলাকা থেকে দুই দফায় আরও ১৪ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে নারী রয়েছেন ছয়জন। সবাই রোহিঙ্গা। গভীর সাগরে ভাসমান অবস্থায় টেকনাফের মাছ ধরার একাধিক নৌকা রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে কূলে নিয়ে আসেন। বর্তমানে ৪৫ রোহিঙ্গা পুলিশ ও কোস্টগার্ডের হেফাজতে রয়েছেন। মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন বাহারছড়া সৈকতের বাইন্যাপাড়ার ঝাউবাগানের ভেতরে রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা চলছে।
দুপুরে বাহারছড়ার শীলখালী সৈকতে তিন রোহিঙ্গা তরুণীর মরদেহ ভেসে আসে বলে জানান পরিদর্শক নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, সমুদ্রের লবণপানি খেয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় জেলেরা জোয়ারের পানিতে তিনটি লাশ ভেসে আসতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলের পৌঁছে লাশগুলো উদ্ধার করে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও উদ্ধার রোহিঙ্গারা জানায়, অবৈধভাবে ট্রলারে চড়ে সমুদ্রপথে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন। মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরির প্রলোভন দিয়ে দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মাথাপিছু ২০ থেকে ৪৫ হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। উদ্ধার ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন দালালও আছেন। তবে এখনো তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সাঁতার কেটে সৈকতে আসা রোহিঙ্গাদের একজন আবদুর রহিম (৩৫)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গভীর সমুদ্রে একটি বড় জাহাজ অপেক্ষা করছিল। ওই জাহাজে ওঠানোর কথা বলে তিন দিন আগে দালাল চক্র শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়া, বালুখালী, মধুরছড়া ক্যাম্প থেকে গাড়িতে তুলে টেকনাফের বাহারছড়া গ্রামে নিয়ে আসে। গতকাল মধ্যরাতে বাহারছড়া সৈকতের বাইন্যাপাড়া ও হলবনিয়া এলাকা নিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গাকে একটি ট্রলারে ওঠানো হয়। সাগর উত্তাল থাকায় ট্রলারটি দুলছিল, কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে ঢেউয়ের ধাক্কায় ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় কিছু রোহিঙ্গা প্লাস্টিকের গ্যালন, কাঠের তক্তায় ভেসে ও সাঁতরে উপকূলে উঠতে সক্ষম হন। তবে অনেকে নিখোঁজ।