কক্সবাজার উপকূলে লবণ চাষের হালচাল জানতে জরিপ করছে বিসিক

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশিখালীতে লবণ চাষির তথ্য সংগ্রহ চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার উপকূলে কী পরিমাণ জমিতে লবণ চাষ হয়েছে, লবণের বাজারমূল্য কেমন, উৎপাদনে কতজন চাষি নিয়োজিত রয়েছেন—এসব তথ্য সংগ্রহে ১৫ দিনের ‘স্যাম্পল সার্ভে’ শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। গত বুধবার সকাল নয়টা থেকে বিসিকের এ জরিপ শুরু হয়। জরিপের প্রথম দুই দিনে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ চাষির তথ্য তালিকাভুক্ত করা গেছে। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে এ বছর লবণমাঠ ও চাষির সংখ্যা বেড়েছে বলে ধারণা করছেন বিসিকের কর্মকর্তারা।

বিসিক সূত্র জানায়, উপজেলা পর্যায়ে ১৩টি পৃথক কেন্দ্রের মাধ্যমে লবণ চাষের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত রয়েছেন বিসিকের ২২ কর্মকর্তা–কর্মচারী। জরিপের প্রথম দিনে প্রায় তিন হাজার চাষির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন ২ হাজার ৭০০ চাষির নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

জরিপকাজের তত্ত্বাবধান করছেন বিসিকের মাঠ পরিদর্শক ইদ্রিস আলীসহ তিনজন কর্মকর্তা। ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। এখন লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুম চলছে। দৈনিক গড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রাথমিক তথ্যে তিনি ধারণা করছেন, অন্তত পাঁচ থেকে ছয় হাজার একর বেশি জমিতে এবার লবণ চাষ হয়েছে।

আরও পড়ুন

জরিপ তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত মনজুর আলম নামের আরেকজন মাঠ পরিদর্শক প্রথম আলোকে বলেন, আগে কেবল সমুদ্রের লোনাপানি মাঠে জমানোর পর সূর্যের তাপে শুকিয়ে চাষিরা লবণ উৎপাদন করতেন। কিন্তু এখন নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ লোনাপানি তুলে লবণের চাষ করছেন অনেক কৃষক। এতে লবণ চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা কিছু বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তবে নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার বিষয়টি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কি না, সেটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

জাকের হোসেন নামের বিসিকের এক মাঠকর্মী তথ্য সংগ্রহ করছেন কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশিখালীতে। তিনি জানান, চাষিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী মৌসুমের শুরুতে (ডিসেম্বর) মাঠে উৎপাদিত প্রতি মণ লবণ ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। জানুয়ারিতে এসে সেই লবণের দাম বেড়ে প্রতি মণ ৫০০ টাকা হয়। তবে এখন তা আবার কমে প্রতি মণ ২৫০ টাকায় ঠেকেছে। লবণের দাম আবার বাড়বে, সে আশায় চাষিরা উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিসিকের কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চলা জরিপ অনুযায়ী জেলায় প্রান্তিক লবণচাষির সংখ্যা ৩৭ হাজার ২৩১। চাষিদের সহযোগী হিসেবে (লবণশ্রমিক) মাঠে কাজ করেন আরও ৮৭ হাজার মানুষ। ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছিল গত মৌসুমে। লবণ উৎপাদন হয় ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন।