‘ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম চড়া, কমব কবে’
চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাজারে ভরা মৌসুমেও ইলিশের তেমন আমদানি নেই। চাহিদার তুলনায় মাছ কম আসায় দাম চড়া। এতে নিম্ন আয়ের ক্রেতা ও মধ্যবিত্তের পাতে জুটছে না ইলিশ। বেচাকেনা কম থাকায় বিক্রেতারা হতাশ।
জেলেরা বলছেন, মেঘনায় প্রত্যাশিত পরিমাণে ইলিশ ধরা না পড়ায় বাজারে ইলিশ কম আসছে। মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, বর্জ্যের দূষণে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায়, খাদ্যশৃঙ্খল (ফুডচেইন) ভেঙে যাওয়ায় ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশের গতিমুখ বদলে যাচ্ছে। এ জন্য ভরা মৌসুমেও মেঘনা ও পদ্মায় ইলিশের তেমন দেখা মিলছে না।
আজ রোববার সকালে মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর ও নারায়ণপুর বাজার এবং মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ ও সুজাতপুর বাজারে দেখা যায়, সেখানে তেমন ইলিশ নেই। অল্পসংখ্যক ইলিশ নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। দাম বেশি শুনে অধিকাংশ ক্রেতাই চলে যাচ্ছেন। তবে কিছু ক্রেতা চড়া মূল্যেই কিনছেন ইলিশ। বেচাকেনায় মন্দাভাব থাকায় ইলিশের বাজারেও হাঁকডাক ও হইচই নেই। এ চিত্র অন্যান্য বছরের এ সময়ের বিপরীত।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার কলেজগেট এলাকার চা-বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, ‘ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীর বায়না মিটাইতে ইলিশ কিনতে বাজারে আইছি। কিনতে পারতাছি না। দাম খুব বেশি। ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম এত চড়া, দাম কমব কবে? আমাগো পাতে আর ইলিশ জুটব না। ইলিশ এহন বড় লোকগো মাছ।’
ওই বাজারের মাছ বিক্রেতা বিমল চন্দ্র বলেন, বাজারে দেড় কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ওই ইলিশ বিক্রেতা আরও বলেন, ইলিশের এই দাম গত দুই বছরের এ সময়ের দেড় থেকে দ্বিগুণ। বাজারে ইলিশ আসছে কম। প্রতিদিন ইলিশ আসে দেড় থেকে দুই মণ। এর অর্ধেকই অবিক্রীত থেকে যায়। বেচাকেনা কম হওয়ায় খুব হতাশ লাগছে।
মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল মালোপাড়ার জেলে রিপন বর্মণ ও মোহনপুর এলাকার জেলে মো. কাউসারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। রিপন বলেন, ‘প্রতি রাতে মেঘনায় ট্রলারে ডিজেল পোড়াইয়া ও অন্যান্য খাতে খরচ পড়ে দুই হাজার টেয়া। জালে ইলিশ আইয়ে ২০ থেকে ২৫টা। ধরা কম পড়নে বাজারেও ইলিশ আসতেছে কম। ইলিশের মৌসুমেও ইলিশ পাইতাছি না। আয়–রুজি কম। পরিবার লইয়া বেকায়দায় আছি।’
ইলিশ কম ধরা পড়ার কারণ জানালেন মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। তাঁর ভাষ্য, কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশে অধিক মাত্রায় দূষিত হচ্ছে মেঘনা ও পদ্মার পানি। পানিদূষণে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায়, খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে যাওয়ায় ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশের গতিমুখ বদলে যাচ্ছে। এসব কারণে ভরা মৌসুমেও ইলিশের তেমন দেখা মিলছে না। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম থাকায় দাম স্বভাবতই বেশি। তবে কয়েক দিন পর প্রত্যাশিত ইলিশ পাওয়া যেতে পারে।