আমার কোনো লোকের ওপর যদি হাত দেয়, তাহলে হাত কেটে ফেলব

এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও ওসি তোফায়েল আহমেদ

এবার পুলিশের হাত কেটে ফেলবেন বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দিলেন চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। একটি মুঠোফোন অডিও রেকর্ডে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কোনো লোকের ওপর যদি হাত দেয়, তাহলে হাত কেটে ফেলব কিন্তু, বলে দিলাম।’

উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নে তাঁর লোককে ধরতে পুলিশ কেন পাঠানো হলো প্রশ্ন করে মুঠোফোনে হাত কেটে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। গত বুধবার সংসদ সদস্য ও ওসি তোফায়েল আহমেদের মধ্যে এই কথোপকথন হয় বলে স্থানীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমানের ৩ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডটি আজ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই কথোপকথনে সরল ইউনিয়নে সংসদ সদস্যের বাড়িতেও কেন পুলিশ গেছে, তার কৈফিয়তও চাওয়া হয় ওসির কাছে। পাশাপাশি নৌকার অনুসারী চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীকেও যেন গ্রেপ্তার করা না হয়—এই হুঁশিয়ারিও ওসিকে দেন সংসদ সদস্য।

মুজিবুল হক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। গত বছর ইউপি নির্বাচনের প্রচারণার সময় ইভিএমে নিজে টিপ মেরে ভোট নিয়ে ফেলবেন বলে বিতর্কিত হয়েছিলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি দিয়ে আবার সমালোচিত হন। সবশেষ কয়েক দিন আগে বাঁশখালীতে ভোটকেন্দ্রে ঈগলের কোনো এজেন্ট ঢুকতে দেবেন না বলে বক্তব্য দেন প্রচারণার সময়।

আরও পড়ুন

বাঁশখালী আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এখানে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র হিসেবে মুজিবুর রহমান ও আবদুল্লাহ কবির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নৌকার সঙ্গে মুজিবুর রহমানের ঈগল প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। প্রচারণার শুরু থেকে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মামলা গ্রহণ করায় ওসি তোফায়েলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। এই ঘটনায় ওসি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। এবার ওসিকে ফোনে পুলিশের হাত কেটে ফেলার হুমকি দেন নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজ।

আরও পড়ুন

ওসির সঙ্গে মোস্তাফিজুরের মুঠোফোন কথোপকথন

মোস্তাফিজুর: ছনুয়া ইউনিয়নে এসআই হাফিজ (হাফিজুর রহমান) কেন গেছে?
ওসি: সে তো ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেকে চলে আসছে।
মোস্তাফিজুর: কী জন্য গেছে?
ওসি: ওটা তো আমাদের নিয়মিত ডিউটি করার জন্য। প্রত্যেক ইউনিয়নে একটা করে টিম যায়।
মোস্তাফিজুর: আমার কোনো লোকের ওপর যদি হাত দেয়, তাহলে হাত কেটে ফেলব কিন্তু। বলে দিলাম।
ওসি: দেবে না স্যার, আমি বলে দিচ্ছি।
মোস্তাফিজুর: ওখানে নাকি আমাদের লোকজন ধরার জন্য হাফিজ গেছে। আমাদের আলমগীর একটা আছে, তাকে খুঁজছে।

ওসি: না না স্যার ও তো নেই, ও অনেক আগে চলে আসছে।
মোস্তাফিজুর: এমনি ঘুরে–ফিরে, থাক অসুবিধা নেই। কিন্তু আমার কোনো লোকের ওপর হাত দিলে অসুবিধা হবে।
ওসি: অবশ্যই স্যার, আপনি যেভাবে বলবেন।
মোস্তাফিজুর: আপনি তো আমার ঘরেও পুলিশ পাঠিয়েছেন।
ওসি: স্যার আপনার সঙ্গে তো আমি কথা বললাম সেদিন। পুলিশ পাঠাইনি। আপনার বাড়িতে তো এমনি পুলিশ নিয়মিত যায়। ওখানে আপনার সঙ্গে ডিটেইল কথা বলছি। আরও আপনার সম্মান বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছি, এমপি সাহেবের বাড়িতে সাদা পোশাকে গেছে।
মোস্তাফিজুর: কী জন্য আসছিল?
ওসি: কোনো কারণে না। কাউকে ধরার জন্য নয়।
মোস্তাফিজুর: চাম্বলের মুজিবের (ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী) ওপরও যাতে কোনো রকমের ইয়ে না হয়। ও ওখানে যেন কাজ করতে পারে, খেয়াল রাখিও।
ওসি: হবে না স্যার। অবশ্যই স্যার।

এই কথোপকথনের ব্যাপারে ওসি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তিনি বারবার ফোন কেটে দেন। জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু শুনিনি। ওসি সাহেবও কিছু বলেননি।’

তবে নাম প্রকাশ না করে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, চাম্বলের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তাঁকে ধরার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। মঙ্গলবার সংসদ সদস্যের বাড়িতেও পুলিশ যায়।

আরও পড়ুন

পুলিশের হাত কেটে নেওয়ার বক্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে প্রথম আলোকে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, এগুলো আপনি তাঁকে (ওসি) জিজ্ঞাসা করেন। এতটুক বলে ফোন কেটে দেন।

উল্লেখ্য, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান নানা কারণে বারবার সমালোচিত হয়েছেন। সংসদ সদস্য হয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করে বিতর্কিত হন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার একটা ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর গত বছর অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে মিছিল করেন। এবার নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন।