রাজশাহীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে মারধরের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ২

মারধরের শিকার মো. নাজির হোসেনছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাহেনুল হকের এক সমর্থককে নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ে নিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার পর চারঘাট মডেল থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের বড় ভাই মো. উজির আলী। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে চারঘাটের সরদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আদিল আলী (৩৬), চারঘাট পৌর বাস্তুহারা লীগের সভাপতি ও চারঘাট পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শামীম সরকার (৪০), চারঘাটের আস্করপুর সরকারপাড়া গ্রামের মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে মো. রাসেল সরকার (৩৫), বথুয়া কদমতলা গ্রামের মো. হাসান আলী (২৮), সাদিপুর মোল্লাপাড়া গ্রামের মৃত জব্বার আলীর ছেলে মো. ফিরোজ আলী (৩৫), গৌড়শহরপুরের মৃত আবু তালেবের ছেলে ফয়সাল হোসেন ওরফে ডন (৩৫) ও আস্করপুরের মৃত আমির হোসেনের ছেলে মো. বাপ্পি (২৫)। এর মধ্যে ফয়সাল ও বাপ্পিকে পুলিশ রাতেই গ্রেপ্তার করেছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নাজির হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের একজন কর্মী। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে চারঘাটের আস্করপুর গ্রামের সারদা বাজারে নৌকা প্রার্থীর অফিসের সামনে পৌঁছালে আসামিরা তাঁকে ধারালো হাঁসুয়া, লোহার রড ও হাতুড়ি নিয়ে পথ রোধ করে গালিগালাজ করতে থাকেন। গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে ইউপি সদস্য আদিল আলীর হুকুমে অন্য আসামিরা তাঁকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে মারতে নৌকা প্রার্থীর অফিসের ভেতরে নিয়ে যান। আদিল আলী ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ভাইয়ের কপালের বাঁ পাশে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করেন। নাম উল্লেখ করা আসামিরা হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করে জখম করে শরীরে। ৪ ও ৫ নম্বর আসামি লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে তাঁর বাঁ হাতের পাঁচ আঙুলে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। তাঁর প্যান্টের পকেট থেকে ৩ হাজার টাকাও বের করে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

এজাহারে আরও বলা হয়, পরে নাজিরের চিৎকারে অন্যরা এগিয়ে গিয়ে উদ্ধার করেন। তখন আসামিরা নাজির হোসেনকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করলে তোকে মারপিট করে মেরে ফেলব।’ পরে তিনি সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর ভাইকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রুত চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে ভর্তি করেন।

রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, রাতেই মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় রাতেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য আদিল আলী রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সাড়ে নয়টার দিকে সরদহ বাজারে গিয়ে ভিড় দেখতে পান। দেখেন সেখানে একজনকে মারধর করা হচ্ছে। একই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় তিনি নাজির আলীকে মারধর থেকে বাঁচান। এ সময় তাঁর পিঠেও আঘাত লেগেছে। পরে তিনি জানতে পারেন যে নাজির নৌকা প্রতীকের অফিসে গিয়ে প্রতীক নিয়ে খারাপ কথা বলেছেন। এ কারণে সেখানে সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

আরেক অভিযুক্ত শামীম সরকার বলেন, তিনি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন। তাঁর ওখানে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সেখানে কোনো ঘটনা ঘটলে তিনি জানতেন। যদি হঠকারী কেউ এটা করে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।