সৈয়দপুরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রচন্ড দাবদাহে নীলফামারীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। গরমের কারণে সড়কের পাশে পানির ট্যাপ ছেড়ে মাথায় পানি দিচ্ছেন এক পথচারী। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে দেশ। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, এ গরম দেশের সর্বত্র। দু-এক দিনের আগে গরম কমার লক্ষণও নেই। আজ মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। মঙ্গলবার বেলা তিনটায় সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে সৈয়দপুরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ১ জুন নীলফামারীতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

সৈয়দপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, আজ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৬ শতাংশ। আজ এটি দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হতে পারে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৪০ দশমিক ৫, শুক্রবার ৪০ দশমিক ১, শনিবার ৩৯ দশমিক ৫, রোববার ৪০ দশমিক ২ ও গতকাল সোমবার ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ৮ জুন পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। ১৩ ও ১৪ জুন বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

আরও পড়ুন

এদিকে প্রচণ্ড দাবদাহ ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন না। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

মঙ্গলবার দুপুরে শহরের মরালসংঘ মোড়ে রিকশার পাটাতনে বসে হাঁপাচ্ছিলেন আতিয়ার রহমান (৪৫)। কোনো দিকে যেন খেয়াল নেই এই রিকশাচালকের। আতিয়ারের বাড়ি জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে। সকাল ১০টার দিকে তিনি শহরে এসেছেন। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত তাঁর আয় হয়েছে ২২০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে তাঁর আয় হতো ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। রিকশার জন্য তাঁকে জমা দিতে হবে ১৬০ টাকা।

দাবদাহে তৃষ্ণার্ত এক পথচারী পথের ধারে নলকূপ চেপে ঠান্ডা পানি পান করছেন। মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর নগরের নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আতিয়ার রহমান বলেন, ‘গরমত দম কুলায়ছে না। একটা ভাড়া মাইরলে আধঘণ্টা জিরির নাগেছে। বেশি দূরতও যাওয়া যায়ছে না। একটা ভাড়া মাইরলে মাথা খালি ঘুরে। একটা ভাড়া মারি আসিনো, এলা দম নিমো। বেশি দূরের ভাড়াত যাওয়া যাইবে না।’

দিনমজুর সফিয়ার রহমান (৪৫) প্রখর রোদে ধান শুকানোর কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘কামাই যয় (যত) টাকা হয়, তার চায় শরীরত কষ্ট হয় বেশি। কিন্তু কী করিবেন, কাম না কইরলে বউ–ছাওয়া খাইবে কী?’

বিজয় কুমার রায় (৪০) নামের আরেকজন বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদ আর গরম। মনে হয়ছে মাথার চান্দি ফাটি যায়ছে। কাঁচা ধান ঘরত থোয়া যায়ছে না। এই জন্য হাজিরা নিয়া তার সাথে নিজেকো কাম করির নাগেছে। রৌদোত বেশিক্ষণ থাকাও যায়ছে না।’

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে গরমের মধ্যে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিডেট (নেসকো) নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলিমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তাঁদের কার্যালয়ের আওতায় ১১টি ফিডারে মোট ৩৬ হাজার ২৯৬ গ্রাহক আছেন। এসব গ্রাহকের জন্য ১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে আজ ৯ মেগাওয়াটের সরবরাহ পাওয়া গেছে। এ জন্য প্রতিটি ফিডারে দিন-রাতে কমপক্ষে তিন থেকে চারবার এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন