আট কিমি সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ১২ বাঁক, চলে না ভারী যান

নীলফামারী শহরের যানজট নিরসনে নির্মিত বাইপাস সড়কটি এমন আঁকাবাঁকা। গত মঙ্গলবার বাদিয়ার মোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারী শহরে যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনা রোধে প্রায় দুই বছর আগে সাড়ে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে অন্তত ১২টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক আছে। এসব বাঁকের একদিক থেকে অপর দিকে কিছুই দেখা যায় না। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আঁকাবাঁকা সড়কে যানবাহন নিয়ে চলাচলে চালকদের বেগ পোহাতে হয়। তাই ভারী যানবাহন চলে না সড়কটিতে।

যে দুই সমস্যা দূর করতে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটি আগের মতোই রয়ে গেছে। মাঝে কয়েক কোটি টাকা গচ্চা গেছে। উল্টো আঁকাবাঁকা এই বাইপাস সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। নতুন একটি সড়কের এই দুরবস্থার জন্য অপরিকল্পিত নির্মাণকাজকে দুষছেন চালকসহ স্থানীয়রা।

শহরবাসীর অভিযোগ, দূরপাল্লার ভারী যানবাহনগুলো শহরের ভেতর দিয়ে চলাচল করছে। পাশাপাশি যত্রতত্র দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার, অবৈধ ইজিবাইক স্ট্যান্ড ও নসিমন-করিমনসহ অবৈধ যান চলাচলের কারণে শহরে যানজট লেগেই থাকে। তবে ভারী যানবাহনের চালকেরা বলছেন, বাইপাস সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক বাঁক থাকায় মালবাহী গাড়ি নিয়ে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়। এ জন্য তাঁরা শহরের মূল সড়ক ধরে চলাচল করেন।

বাইপাস সড়কে কয়েকটি বাঁকের কারণে যান চলাচলে সমস্যা হয়। এসব বাঁক ঠিক করার বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে।
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, সওজ বিভাগ নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী

কলেজশিক্ষক আলী হোসেন বলেন, একই পথে রিকশা, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, ভটভটি, ট্রাক্টর, নছিমন, করিমন সবই অবাধে চলাচল করছে। বাইপাস সড়ক হলেও সব ধরনের যানবাহন শহরের ভেতর দিয়ে চলাচল করে। এতে শহরে যানজট লেগে থাকছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কালীতলা থেকে গাছবাড়ি পর্যন্ত শহরের ওপর দিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক আছে। সড়কটিতে প্রায় সময় যানজট লেগেই থাকে। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শহরের যানজট নিরসনে ২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর বাইপাস সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করে সওজ বিভাগ। শহরের মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে নটখানা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। ওই স্থানে আগেই একটি সড়ক ছিল। সেই সড়ক ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে ৩ দশমিক ৭০ মিটার প্রশস্ত করা হয় শুধু। বাঁকগুলো সোজা করা হয়নি।

সওজ বিভাগ নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাইপাস সড়কে কয়েকটি বাঁকের কারণে যান চলাচলে সমস্যা হয়। এসব বাঁক ঠিক করার বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে।

সড়কটির কার্যকারিতা বাড়াতে তাঁদের পরিকল্পনা আছে জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, এ জন্য ৮ দশমিক ৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। সেটি হয়ে গেলে খুব সহজে বাইপাস হয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দপুর থেকে আঞ্চলিক সড়ক ধরে নীলফামারীর দিকে আসার পথে শহরের প্রবেশদ্বার মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে বাইপাস সড়কের শুরু। এরপর কারাগার, পাঁচমাথা, ইটাখোলা ইউনিয়নের বাদিয়ার মোড়, মায়ার মোড়, শাহপাড়া, শিমুলতলী মোড়, টুপামারী বাইপাস মোড় হয়ে নটখানায় মূল সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে সড়কটি। এর মধ্যে বাদিয়ার মোড় এলাকায় ৫০০ মিটারের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক আছে ৫টি। শাহপাড়া থেকে শিমুলতলী মোড় পর্যন্ত ৭০০ মিটারের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক আছে অন্তত ৭টি। এ ছাড়া মায়ার মোড়, টুপামারী বাইপাস মোড় ও নটখানায় এলাকায় কয়েকটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক আছে।

ট্রাকচালক আলমগীর হোসেন বলেন, বাইপাস সড়কটিতে অনেক বড় বড় বাঁক আছে। এসব বাঁকে বড় গাড়ি ঘোরানো কষ্টকর। বাঁক ঘুরতে গিয়ে একাধিকবার গাড়ি সামনে-পেছনে নিতে হয়। কিন্তু মালবাহী গাড়ি এভাবে সামনে-পেছনে নিতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে, গাড়ির সমস্যা হয়। এ জন্য চালকেরা বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।

বাইপাস সড়কটিতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা যেন নিত্যসঙ্গী। গত মঙ্গলবার সকালে ইটাখোলা ইউনিয়নের বাদিয়ার মোড় এলাকার বাইপাস সড়কে ট্রাক ও ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান (৬৮) বলেন, এখানকার বাঁকটি এমন যে একদিক থেকে অন্য দিকের গাড়ি এলে বোঝা যায় না। তাই প্রায় সময় এখানে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে।

টুপামারী ইউনিয়নের দোগাছি গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২৫) বলেন, তিন মাস আগে বাইপাস সড়কের শিমুলতলী এলাকায় একটি মালবোঝাই ট্রাক বাঁক নিতে গিয়ে উল্টে পড়ে। এতে চালকসহ দুজন গুরুতর আহত হন।

প্রায় দেড় বছর আগে ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র দুর্ঘটনায় নিহত হয়।

নীলফামারী উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, শহরের সড়কটি সংকীর্ণ ও অবাধে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও রিকশা ভ্যান চলাচল করায় সর্বদা যানজট লেগে থাকে। বাইপাস সড়কটি সংস্কার করা হলে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।