সীমান্তে পড়ে ছিলেন মুমূর্ষু যুবক, উদ্ধার করতে করতে গেল প্রাণ

কুমিল্লা জেলার মানচিত্র

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিব) সঙ্গে পতাকা বৈঠক শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই যুবকের লাশ হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে সীমান্তে তুষার খাঁ (৩৫) নামের ওই যুবককে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। এরপর খবর পেয়ে বিজিবি ও বিএসএফের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু তাৎক্ষণিক যুবকের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় তাঁকে উদ্ধার করা নিয়ে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর উদ্ধার করতে করতে ওই যুবকের মৃত্যু হয়।

তুষার খাঁ নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার বালুভরা এলাকার মোসলেম খাঁর ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল এলাকায় ফুফু আসমা বেগমের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।

উদ্ধারের সময় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা কাজী তানভীর আবসাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে চারটায় ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত অবস্থায় পান। নিহত ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপ্পেলা রাজু নাহা প্রথম আলোকে বলেন, পতাকা বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএসএফের কাছ থেকে লাশ বুঝে নেয় বিজিবি। পরে রাতে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজ শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্ত করার জন্য মরদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে নিহত ব্যক্তির পরিবার থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নারায়ণপুর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মো. রমজান খাঁ বলেন, এক মুসল্লি মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করে বাড়িতে ফেরার পথে সীমান্তে একজনকে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পান। এ সময় ওই মুসল্লি মসজিদে এসে একটি লুঙ্গি নিয়ে তাঁকে ঢেকে দিয়ে বাড়িতে চলে যান।

মো. খোকন মিয়া নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তাঁরা বিভিন্ন লোকমারফত জানতে পারেন, সীমান্তে একজন আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, লোকটি বাংলাদেশ-ভারত সীমানাখুঁটি থেকে প্রায় ১০ ফুট ভারতের অভ্যন্তরে জীবিত অবস্থায় পড়ে আছেন। কিন্তু কোনো কথা বলতে পারছেন না। তাঁর শুধু শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। পরে খবর দিলে ঘটনাস্থলে বিজিবি আসে। বিএসএফের সঙ্গে এ বিষয়ে দফায় দফায় কথা বলা ও পতাকা বৈঠক হয়। একপর্যায়ে আহত অবস্থায় পড়ে থাকা লোকটি মারা যান।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম পরিচয় না পাওয়ায় বিজিবি দাবি করে, যুবকটি ভারতের নাগরিক। অপর দিকে বিএসএফ দাবি করে, অজ্ঞাতনামা যুবকটি বাংলাদেশের নাগরিক। পরে দুপুর ১২টায় ওই যুবকের ফুফু আসমা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করেন।

শশীদল বিওপির বিজিবি কমান্ডার নায়েব সুবেদার আবদুল খালেক বলেন, তাঁরা সকাল ছয়টায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অজ্ঞাতনামা যুবককে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। ভারতের অভ্যন্তরে থাকায় এবং পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় যথাসময়ে তাঁকে বাংলাদেশে আনা যায়নি। তাঁরা আহত ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বিএসএফকে একাধিকবার বলেছেন। ভারতীয় সীমান্তে থাকায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ওই যুবককে বিএসএফ তাদের দেশে নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

নায়েব সুবেদার আবদুল খালেক বলেন, পরে অজ্ঞাতনামা যুবকের পরিচয় জানতে পেরে তাঁরা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সন্ধ্যায় মরদেহ বাংলাদেশ সীমান্তে এনে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহত তুষারের ফুফু আসমা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী অসুস্থ। তিনি কুমিল্লা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর ভাইপো তুষার খাঁ ফুফুকে দেখতে গত বুধবার সকালে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে সকাল ১০টায় তুষারকে শশীদল এলাকায় বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর পর থেকে তুষারের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে ফেসবুকে ছবি দেখতে পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্ত করেন। আসমা বেগম বলেন, ‘তাকে তো এলাকার কেউ চিনে না। কীভাবে সীমান্তের ওপারে তাঁর লাশ পাওয়া গেল, তার বুঝতে পারছি না। আমরা সরকারের কাছে তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।’