‘আষ্টজন পুলিশ কি সেন্টারের ভেতরে না বাইরে রক্ষা করবে’

নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন মাহমুদ (ডানে সাদা শার্ট পরিহিত)।ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলের হুমকি দিয়েছেন সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন মাহমুদ। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলা বাটাজোর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারিছুর রহমানের সমর্থনে আয়োজিত নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা করার সময় তিনি ওই হুমকি দেন।

ইতিমধ্যে সুমন মাহমুদের ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ৩৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সুমন মাহমুদকে বলতে শোনা যায়, ‘ওরা যাইবে জোয়ারে ভাইসা। ওরা আইয়া বিভিন্ন ধরনের কথা বলে, পুলিশ থাকবে ২০ জন, ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে আষ্টজন, তা কি শুধু এই বাহাদুরপুর সেন্টারেই থাকবে? একটা সেন্টারে পুলিশ থাকবে আষ্টজন। আষ্টজন পুলিশ কি করতে পারে এই দেশে? আর পুলিশ আইয়া কি ওগো পক্ষে থাকবে? তাইলে মোরা আছি কি করতে? হারিছ মিয়ার চাইতে মনির মেয়ার চেহারা ভালো দেহায়? আষ্টজন পুলিশ কি সেন্টারের ভেতরে রক্ষা করবে না বাইরে রক্ষা করবে?’

এ বিষয়ে সুমন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় আমাদের ভোটারদের প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে বক্তব্য দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার নেতা হারিছুর রহমানের মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে আমি এমন বক্তব্য দিয়েছি।’

তৃতীয় ধাপে ২৯ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে গৌরনদীতে হারিছুর রহমান (মোটরসাইকেল) ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে আরও দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া (কাপ-পিরিচ) এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার ওরফে মেরী (আনারস)। এর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান মনির হোসেন মিয়াকে সমর্থন দিয়েছেন।

জানতে চাইলে মনির হোসেন মিয়া বলেন, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হারিছুর রহমান ততই সংঘাতের দিকে এগোচ্ছেন। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তিনি ভোটকেন্দ্র দখল করে নেওয়ার হুমকি দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বরিশালের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রার্থীদের তাঁর নাম ভাঙাতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু হারিছুরের সমর্থকেরা তাঁর নাম ভাঙিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হারিছুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনে আমার বিজয় নিশ্চিত জেনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা একের পর এক ষড়যন্ত্র করছেন। এতেও না পেরে এখন মিথ্যাচার চালাচ্ছে। আমার প্রতি ভোটারদের নিরঙ্কুশ সমর্থন আছে। সাধারণ ভোটাররা ২৯ মে ব্যালটের মাধ্যমে সব ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন।’

গৌরনদী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এমন কোনো বক্তব্যের বিষয়ে জানেন না। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো হুমকিধমকি দিয়ে লাভ হবে না।

এ বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, এমন কোনো ভিডিও তাঁদের সামনে আসেনি। এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে পুলিশ সর্বাত্মকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে।