অসহায় রোজিনা পেলেন নতুন ঘর

শরীয়তপুর সদরের চরডোমসার এলাকার রোজিনা আক্তারকে দেওয়া নতুন ঘর। সোমবার তোলা
ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরডোমসার বেদেপল্লির বাসিন্দা রোজিনা আক্তার থাকার একটি নতুন ঘর পেয়েছেন। ঘরটি নির্মাণ করে দিয়েছে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন। সোমবার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ রোজিনার হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন।

রোজিনা আক্তারের স্বামী নেই। বাঁশ ও প্লাস্টিকের তৈরি একটি ছাপরায় দুই শিশুসন্তান নিয়ে থাকতেন। কিন্তু ঘরটি বসবাসের উপযোগী ছিল না। ঝড়বৃষ্টিতে ঘরের মধ্যে পানি পড়ত। তাই শিশুসন্তান নিয়ে সেখানে থাকতে তাঁর খুব কষ্ট হতো। উপরন্তু সংসারে ছিল তীব্র অভাব। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে তাঁর এক শিশুসন্তান অন্যের কাছে তুলে দেন। রোজিনার এই করুণ অবস্থা নিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে ‘দারিদ্র্যের কারণে মেয়েকে আত্মীয়ের কাছে দিয়ে এখন কাঁদছেন মা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজিনাকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। দুই কক্ষবিশিষ্ট, বারান্দাসহ পাকা ঘরটি নির্মাণ করতে ব্যয় করা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

সোমবার রোজিনার হাতে ওই ঘরের চাবি তুলে দেওয়ার সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জি এম সাইফুল ইসলাম, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেগুপ্তা মেহনাজ ও ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

শরীয়তপুর সদরের চরডোমসার এলাকার রোজিনা আক্তারের হাতে নতুন ঘরের চাবি তুলে দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ
ছবি: সংগৃহীত

বেদেপল্লির বাসিন্দারা জানান, রোজিনা আক্তারের স্বামীর নাম সিবন সরদার। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খৈরা গ্রামে তাঁদের বাড়ি ছিল। পদ্মা নদীর ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। ওই সময় তাঁরা শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরডোমসার গ্রামে কীর্তিনাশা নদীর তীরে এসে বসতি গড়ে তোলেন। তাঁরা তাঁদের আদি পেশায় নিয়োজিত হন। যা আয় হতো তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলত। সেখান থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে চরডোমসারে ৪ শতক জমি কেনেন সিবন সরদার। টাকার অভাবে তাতে ঘর তুলতে পারেননি। প্লাস্টিক ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা একটি ছাপরা বানিয়ে বসবাস করতে থাকেন।

২০২১ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সিবন মারা যান। তাঁর মৃত্যুর সময় রোজিনা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। স্বামীর মৃত্যু, সংসারে অভাব ও সন্তান জন্ম নেওয়ার পর রোজিনা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তখন বেদেপল্লির কয়েকজনের পরামর্শে রোজিনা তাঁর গর্ভের সন্তান জন্ম নেওয়ার পর এক আত্মীয়কে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

২০২২ সালের ৫ এপ্রিল একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন রোজিনা। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে ওই সন্তান পলি আক্তার নামের এক নারীর কাছে তুলে দেওয়া হয়। পলি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গোয়ালদিমান্ডা গ্রামে বসবাস করেন।

রোজিনা আক্তারের জীবনের এই কষ্টের কথা শুনে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র চরডোমসার বেদেপল্লিতে যান। জেলা প্রশাসক ১০ হাজার টাকা ও খাদ্যসহায়তা দেন এবং রোজিনাকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

রোজিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে কীর্তিনাশা নদীর তীরে আশ্রয় নিয়েছি। স্বামী মারা যাওয়ার পর অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে যাই। এখন একটি ঘর পেয়েছি। তাতে বসবাস করতে পারব। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পেয়েছি। তাতে হয়তো সংসারের অভাব কিছুটা কমবে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আমার আত্মীয় আমার সেই শিশুসন্তানকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলেই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। অর্থের অভাবে আমার সঙ্গে থাকা আরেক ছেলেসন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসন ওই ছেলের পড়ালেখা করানোর দায়িত্ব নিয়েছে।’

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজিনার এমন দুর্দশার কথা আমাদের জানা ছিল না। গণমাধ্যমের কারণে জেনেছি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাঁকে বিধবা ভাতা দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে তাঁকে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তাঁর সন্তানকে পড়ালেখা করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’