একটি চিলকে মুক্ত করার কাহিনি
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। পশ্চিমে হেলে পড়ছে সূর্য। শেষবেলার রাঙা রোদ পড়েছে গাছপালায়, বাড়ির ছাদে। গতকাল রোববার বিকেলের ঘটনা। মৌলভীবাজার পৌরসভার পুকুরপারে মেয়র চত্বরে একটি রাজনৈতিক দলের জনসভা চলছে তখন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অনেক মানুষ সেখানে। চেয়ারে বসে কেউ কেউ বক্তাদের কথা শুনছেন। অনেকে এলোমেলো হাঁটাহাঁটি করছেন।
এ সময়ে অনেকের চোখ যায় আকাশের দিকে। মেয়র চত্বরের কাছেই পৌরসভার পুকুরের উত্তর দিকে বাসাবাড়ির ওপর অনেকগুলো পাখি উড়ছে। খেয়াল করলে বোঝা যায়, সেগুলো চিল। কাছাকাছি কোথাও দল বেঁধে নিচে নামছে চিলগুলো। আবার ওপরে উঠে যাচ্ছে।
কিন্তু যাঁরা চিলগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন, তাঁদের অনেকের মধ্যে আবার নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এত চিল এখানে আসার কী কারণ থাকতে পারে? সচরাচর তো এ রকম দেখা যায় না। অন্যদিকে চিলের ডাকাডাকিও খানিকটা অন্য রকম লাগছিল। তাঁদের একজন গণমাধ্যমকর্মী সালেহ এলাহী কুটি। তিনি ওই চিল দলের ছবি তুলতে গেলেন। তখন বেরিয়ে আসে ‘চিল সমাবেশের’ প্রকৃত কারণটি।
সালেহ এলাহী কুটি বলেন, তিনিও অন্যদের মতো মেয়র চত্বরের সমাবেশে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে, অনেকগুলো চিল একই স্থানে, অর্থাৎ পৌরসভার পুকুরের উত্তর পাশে ঘুরেফিরে উড়ছে। এর ছবি তুলতে চাইলেন। কিন্তু এতটা দূর থেকে ভালো ছবি হচ্ছে না। তিনি কাছ থেকে ছবি তুলতে চাইছিলেন। সেখানে একটি নতুন ভবনে নির্মাণকাজ চলছে। শ্রমিকেরা টুকটাক কাজ করছেন। নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়ি বেয়ে তিনি পাঁচতলায় উঠে যান। সেখানে গিয়ে তাঁর চোখ ছানাবড়া।
সালেহ দেখেন, দালানের পিলার তৈরির একটি কাঠের টুকরার ফাঁকে গলা আটকে গেছে একটি চিলের। সেই চিলকে ছাড়িয়ে নিতে আরও দুটি চিল ওই চিলকে ঠোঁট দিয়ে টানাটানি করছে। উড়ন্ত দুটি চিল চেষ্টা করছে চিলটিকে মুক্ত করতে। কিন্তু কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না। এতে চিলের পালক খসে পড়ছে। অন্য চিলগুলো ঝাঁক বেঁধে সেই ভবনের ওপরেই ওড়াউড়ি করছে, চিৎকার করছে।
সালেহ তখন ওই ভবনের নির্মাণকর্মীদের নিচ থেকে ডেকে নেন। এরপর মো. কামরুল নামের এক নির্মাণকর্মী ভবনের প্রান্তে গিয়ে সেখানে কাঠের ফাঁকে আটকে থাকা চিলটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। পরে চিলটিকে পানি খাওয়ানো হয়, মাথায় পানি দেওয়া হয়। দুটি ডানা মুক্ত করার পরই চিলটি দ্রুত শূন্যে উড়ে যায়। এদিকে সঙ্গীকে কাছে পেয়ে মুহূর্তেই থেমে যায় ঝাঁকের উড়ন্ত চিলগুলোর চেঁচামেচি। চিলের ঝাঁক চলে যায় ওই স্থান ছেড়ে যায়। ফাঁকা হয়ে যায় সন্ধ্যার আকাশ।
সালেহ এলাহী কুটি বলেন, ‘আমি মেয়র চত্বর থেকে শত শত পাখির ওড়াউড়ি দেখে মূলত ছবি তুলতে ওই বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলার ছাদে উঠি। গিয়ে দেখি, পাখিটা আটকে আছে। ঝুলন্ত বিমের শাটারিংয়ের কাঠের ওপরের দিকে ফাঁক ছিল। পাখিটি সে ফাঁকা জায়গায় কোনোভাবে আটকা পড়ে। আমি তখনই বিল্ডিংয়ের লোকজনকে ডাকি। কামরুল নামের ছেলেটা অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে পাখিটাকে উদ্ধার করেছে। সঙ্গী মুক্ত হওয়ার পর বাকি পাখিরা নীড়ে ফিরে গেছে।’