জামিন পেলেন মাদারীপুরে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার তিন কলেজছাত্র
মাদারীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতাদের আমন্ত্রণ না করায় ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার তিন কলেজছাত্রকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটায় মাদারীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশীদ খান তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে ওই তিন কলেজছাত্রকে ৫৪ ধারায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ওই তিন কলেজছাত্রকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বিচারকের কাছে তাঁদের জামিনের জন্য আবেদন জানান। আদালত শুনানি শেষে ওই তিন কলেজছাত্রের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়া ছাত্ররা হলেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার সাইফুল্লাহ মানসুর (২৩), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাগিয়া এলাকার হামিম মোল্লা (২১) ও বরগুনার আমতলী উপজেলার মাহফুজুর রহমান (২১)। সাইফুল্লাহ মাদারীপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের এবং হামিম ও মাহফুজুর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
থানা-পুলিশ ও কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে নবীনবরণ উৎসবের আয়োজন করে মাদারীপুর জিনিয়াস ক্লাব নামের একটি ছাত্রসংগঠন। এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাইফুল্লাহ মানসুর নবীনবরণ উৎসবের মূল আয়োজক। তাঁর নেতৃত্বে অন্য বিভাগের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে কলেজের মূল ভবনের ৮ নম্বর কক্ষে সকাল থেকেই চলতে থাকে উৎসবের প্রস্তুতি।
বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই কক্ষে গিয়ে বাধা দেন। পরে সাইফুল্লাহসহ তিন কলেজছাত্রকে শিবিরের নেতা-কর্মী আখ্যায়িত করে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয় ছাত্রলীগ। পরে সদর মডেল থানা-পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ কলেজে গিয়ে ওই তিন কলেজছাত্রকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইন ও প্রিন্টে ‘নবীনবরণে ছাত্রলীগ নেতাদের আমন্ত্রণ না জানানোয় “শিবির” আখ্যা দিয়ে তিনজনকে আটক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তিন কলেজছাত্র দাবি করেন, তাঁরা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী। তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। নবীনবরণ উৎসবে ছাত্রলীগের কাউকে আমন্ত্রণ না জানানোয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একজোট হয়ে তাঁদের ‘শিবির’ বলে আখ্যা দিয়ে স্লোগান দেন এবং পুলিশে ধরিয়ে দেন। তাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কলেজ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
মাহফুজুর রহমানের ভাই আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। আমি নিজেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। আমার ভাই মাহফুজুর পড়ালেখা ছাড়া কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। ওই দিন কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে থাকায় ছাত্রলীগের লোকজন শিবির আখ্যা দিয়ে ওকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বিনা অপরাধে আমার ভাই এক দিন জেল খাটল, হয়রানির শিকার হলো।’
এ সম্পর্কে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত মনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ওই তিন কলেজছাত্রকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। ওই কলেজছাত্রদের নামে আগে–পরে থানায় কোনো মামলার রেকর্ড নেই। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা হয়তো শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তাই সন্দেহ থাকায় তাঁদের কোর্টে চালান করা হয়।