নেত্রকোনায় মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ, গ্রামবাসীর হামলায় নিখোঁজ ৩ জেলের লাশ উদ্ধার
নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের জেরে গ্রামবাসীর ধাওয়ায় ধনু নদে নিখোঁজ তিন ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে নদের রসুলপুর এলাকা থেকে স্থানীয় থানা-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মরদেহগুলো উদ্ধার করেন।
মরদেহ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন আটপাড়া উপজেলার রূপচন্দ্রপুর গ্রামের শহিদ মিয়া (৪৫), মদন উপজেলার বাগজান গ্রামের রুকন মিয়া (৪২) ও কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি গ্রামের হৃদয় মিয়া (৩২)। এ ঘটনায় নিখোঁজ মদনের গোবিন্দপুর গ্রামের ইয়াসিন মিয়ার (২১) সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে মাছশিকারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালিয়াজুরি উপজেলার বিভিন্ন জলমহালে পলো দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। শনিবার সকালে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সহস্রাধিক মাছশিকারি পলো ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একটি জলমহালের মাছ শিকার করতে যান। মাছশিকারিরা ধনু নদের রসুলপুর ঘাটে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ রেখে নদ পার হতে ফেরি নৌকায় যেতে চাইলে রসুলপুর গ্রামের লোকজন তাঁদের বাধা দেন। এর জেরে মাছশিকারিরা প্রথমে রসুলপুর বাজারে এবং পরে গ্রামের বাড়িঘরে হামলা করেন। তখন গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে তাঁদের প্রতিহত করতে এগিয়ে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক লোক আহত হন। এ ছাড়া বেশ কিছু দোকানপাট, ঘর, যানবাহন ভাঙচুরসহ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় বেশ কয়েকজন মাছশিকারি প্রাণ বাঁচাতে ধনু নদে ঝাঁপ দেন। তাঁদের মধ্যে চারজন নিখোঁজ হন। আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে নিখোঁজ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো একজন নিখোঁজ আছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এই ঘটনায় আজ সোমবার সকাল থেকেই খালিয়াজুরুর লোকজন রসুলপুর এবং মদন উপজেলার লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে গোবিন্দশ্রী এলাকায় সংঘর্ষে লিপ্ত হতে একত্রিত হন। তবে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাহেব আলী পাঠানের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত রাখে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধারের পর আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ লাইনস থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও নেত্রকোনা অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছে।
খালিয়াজুরির পুরানহাটি গ্রামের একজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত মানুষ খালিয়াজুরি এসে ইতিমধ্যে তেলাপায়া, মাখরাইন, কীর্তনখোলা, খারি, মরা ধনু, বাজুয়াইল ও শালিকা জলমহালে মাছ শিকার করে লুটে নিয়ে গেছে। এসব জলমহাল সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া ছিল। শনিবার সকালে সংঘবদ্ধ চক্রটি একটি জলমহালে মাছ লুটের চেষ্টা চালালে স্থানীয় লোকজন তাঁদের নদী পার হতে বাধা দেন। এ সময় তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে হামলা চালানোসহ মারধর করেন। পরে এলাকাবাসী একত্র হয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় প্রচুর যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ধাওয়া খেয়ে নিখোঁজ হওয়া তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা সাহেব আলী পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। খালিয়াজুরি থানার পুলিশ ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।