জাফলংয়ে প্রশাসনের দিনভর অভিযান, নদীতে ফেলে দেওয়া হলো ৮০০ নৌকার বালু

সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ের ইসিএভুক্ত স্থানে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর টাক্সফোর্স অভিযান পরিচালনা করেছে স্থানীয় প্রশাসনছবি: প্রথম আলো

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের ইসিএভুক্ত (প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা) স্থানে টাক্সফোর্স অভিযান পরিচালনা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত অর্ধশত নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় আট শ নৌকার বালু নদীর পানিতে ‘আনলোড’ (খালাস) করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। অভিযান–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাঈদুল ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমদ, বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার জাবেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইসিএভুক্ত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ৫০টি নৌকা শাবল দিয়ে ফুটো করে বিনষ্ট করা হয়। এ ছাড়া জাফলং দিয়ে প্রবাহিত পিয়াইন ও গোয়াইন নদ থেকে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত প্রায় আট শ নৌকাভর্তি বালু পানিতে ‘আনলোড’ (খালাস) করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪৫টি ট্রাকের বালু আনলোড করে নদের তীরে জব্দ করা হয়। কী পরিমাণ বালু ট্রাক থেকে জব্দ করা হয়েছে, এর পরিমাপ চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাফলংয়ের পিয়াইন ও গোয়াইন নদের বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকা দিয়ে শ্রমিকেরা বালু ও পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে তীরে নিয়ে আসেন। পরে তীর থেকে এসব বালু-পাথর ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এই ট্রাক চলাচলের পথও গতকাল অভিযানের সময় রড-সিমেন্টের পিলার বসিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জাফলং বল্লাঘাট, জুমপাড়, লাখেরপার, নয়াবস্তি ও জাফলং ব্রিজ এলাকার পাঁচটি পয়েন্টে ব্যারিকেড দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযান পরিচালনার সময় স্থানীয় শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন। তাঁদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই ইসিএভুক্ত এলাকার বালু-পাথর লুটপাট করার জন্য সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল জেলা থেকে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিককে জাফলংয়ে আনা হয়েছে। বিষয়টি ভারতের সীমান্তবর্তী জাফলং এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

এ ছাড়া জাফলংয়ে খোলা আকাশের নিচে নদীর পাশে এবং বালুর চরে সিলেটের বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য গড়ে তোলা ১০টি শ্রমিক ক্যাম্প অপসারণ করা হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব বহিরাগত শ্রমিকদের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করাটা উদ্বেগজনক বলে অভিযানকারী দলের সদস্যরা মনে করছেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই ইসিএভুক্ত এলাকার বালু-পাথর লুটপাট করার জন্য সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল জেলা থেকে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিককে জাফলংয়ে আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাটের ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ইসিএভুক্ত এলাকায় অবৈধভাবে যেন কেউ বালু বা পাথর উত্তোলন করতে না পারেন, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারি আছে। তাই টাক্সফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হয়। জাফলংয়ের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় ভবিষ্যতেও অভিযানের ধারাবাহিকতা রাখা হবে।