ফরিদপুরে সাংবাদিক গৌতম হত্যা মামলার আসামি আসিফ ইমরানের মৃত্যু কারাগারে

আসিফ ইমরান
ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আসিফ ইমরান (৫৬) ফরিদপুর কারাগারে মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টার দিকে তাঁকে তাঁর শয্যায় নিস্তেজ অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে কারা কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাঁকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ইমরান হোসেন ফরিদপুর জেলা কারাগারে কয়েদিদের জন্য নির্ধারিত মেঘনা নামের ওয়ার্ডে থাকতেন। তিনি ফরিদপুর শহরের কুঠিবাড়ি কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা। তাঁর এক মেয়ে রয়েছে।

ফরিদপুরের জেল সুপার মো. তায়েফ উদ্দিন জানান, ধারণা করা হচ্ছে রাতে ঘুমের মধ্যে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়ে থাকতে পারেন ইমরান। এর আগেও তিনি দুই দফায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঠানো হয়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

সাংবাদিক গৌতম দাস দৈনিক সমকালের ফরিদপুর ব্যুরোপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। আসামিরা ওই অফিসে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন গৌতম দাসকে।

ফরিদপুর শহরের মুজিব সড়কের সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ করায় সাংবাদিক গৌতম দাসের ওপর ক্ষুব্ধ হয় ঠিকাদারগোষ্ঠী ও তাঁদের সহযোগী সন্ত্রাসী চক্র। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর ফরিদপুরে দৈনিক সমকালের ব্যুরো অফিসে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় গৌতম দাসকে। তিনি সে সময় দৈনিক সমকালের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে ব্যুরোপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।

নিহত সাংবাদিক গৌতম দাস
ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনায় দৈনিক সমকালের ফরিদপুর প্রতিনিধি হাসানউজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারি এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম নবী আসিফ ইমরানসহ ১০ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট এ হত্যা মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়।

মামলার এক আসামি জাহিদ খান পলাতক অবস্থায় ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর ঢাকায় মারা যান। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুরুদ্দীন ২০১৩ সালের ২৭ জুন সাংবাদিক গোৗতম দাস হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে বাকি ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। আসামিরা হলেন আসিফ ইমরান, আসিফ ইমতিয়াজ, কাজী মুরাদ, কামরুল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান, আসাদ বিন কাদের, রাজিব হাসান, তামজিদ হোসেন ও আবু তাহের মোর্তজা।

আসামিরা এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর বিচারপতি এ কে এম আবদুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীরের সমন্বয়ে একটি বেঞ্চ ৯ আসামির মধ্যে চারজনকে খালাস দেন। তাঁরা হলেন আসিফ ইমতিয়াজ, কামরুল ইসলাম, কাজী মুরাদ ও রাজিব হাসান। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আসিফ ইমরানসহ বাকি পাঁচ আসামি আপিল করেন।  আপিলটি বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

আসিফ ইমরানের মৃত্যুর পর এ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাকি চার আসামি বর্তমানে ফরিদপুর জেলা কারাগারে আছেন। তাঁরা হলেন আসাদ বিন কাদের, সিদ্দিকুর রহমান, তামজিদ হোসেন ও আবু তাহের মুর্তজা।