ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতি, গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রেপ্তার ৪৬

গাইবান্ধায় র‍্যাবের অভিযানে জব্দ করা ইলেকট্রনিক ডিভাইস
ছবি: প্রথম আলো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগে গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে গাইবান্ধায় বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে জালিয়াতি চক্রের পাঁচ মূল হোতাসহ ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। অন্যদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা দেওয়ায় ৯ পরীক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে আজ শুক্রবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭।

গাইবান্ধায় নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত পরীক্ষার্থী ও জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর আজ বেলা সাড়ে তিনটায় জেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে সংবাদ ব্রিফিং করে র‍্যাব। এর আগে আজ রংপুর ও সৈয়দপুরে জালিয়াতির অভিযোগে ২২ জনকে আটক করা হয়।

র‍্যাব-১৩-এর কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরীক্ষা চলাকালে র‍্যাব-১৩ গাইবান্ধা ক্যাম্পের একটি দল বিভিন্ন কেন্দ্রে অভিযান চালায়। এ সময় পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে জালিয়াতি চক্রের ৫ মূল হোতা ও ৩২ জন পরীক্ষার্থীকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ২৪টি মাস্টার কার্ড, ২০টি ব্লুটুথ ডিভাইস, ১৭টি মুঠোফোন, স্ট্যাম্পসহ ব্যাংক চেক জব্দ করা হয়।

আরও পড়ুন

গ্রেপ্তার মূল হোতারা হলেন মারুফ, মুন্না, সোহেল, নজরুল ও সোহাগ। তাঁদের সবার বাড়ি গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকায়। তাঁরা বিভিন্ন পরীক্ষার্থীকে ১৪ থেকে ১৮ লাখ টাকায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আসছিলেন। গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থীদের নাম–পরিচয় জানানো হয়নি।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পরীক্ষার্থীরা জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার স্বীকার করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে সুকৌশলে পরীক্ষা দিয়ে আসছিলেন। এ ঘটনায় জড়িত চক্রের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার সাতটি উপজেলায় সহকারী শিক্ষক পদে প্রায় ৭০০টি শূন্য পদের বিপরীতে ৩০ হাজার ৮৮ জন আবেদন করেন। আজ ৪৭টি কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তাঁদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলো অনলাইনে ‘গাইবান্ধায় প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে তৎপর কন্ট্রাক্ট পার্টি’ শিরোনাম একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ঠাকুরগাঁওয়ে ৯ পরীক্ষার্থী আটক

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরপত্রসহ (ওএমআর) ৯ পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানা–পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।

আটক পরীক্ষার্থীরা হলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের রোজিনা খাতুন; রানীশৈংকল উপজেলার আলশিয়া গ্রামের সোহানুর রহমান, বাজেবকশা গ্রামের টংক নাথ বর্মণ, আবদুল্লাহ আল-মামুন ও মনিরুল ইসলাম; পীরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মোছা. আর্জিনা, পাটুয়াপাড়া গ্রামের ওমর ফারুক; বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিনমারী গ্রামের হাসনাহেনা ও আলেকসিপি গ্রামের আনোয়ার খালেদ।

আরও পড়ুন

সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁও কচুবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২ জন, কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে ১, সরকারি কলেজকেন্দ্র থেকে ১, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১ জনকে ডিভাইসসহ আটক করা হয়। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও রোড ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে দুজন এবং আর কে স্টেট উচ্চবিদ্যালয় থেকে একজনকে ওএমআর শিটসহ আটক করা হয়।

সদর উপজেলার ভুল্লি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল উদ্দিন বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা দেওয়ায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সদর থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেন, সদর থানার আওতাধীন বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে জালিয়াতির অভিযোগে সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চারজনের কাছে বিভিন্ন ডিভাইস পাওয়া গেছে এবং বাকি তিনজন বাসা থেকে উত্তরপত্র পূরণ করে নিয়ে আসেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।