যাত্রাপথে সাতক্ষীরায় বিএনপির নেতা–কর্মীবাহী ট্রাক আটকে দিল পুলিশ
খুলনার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সাতক্ষীরার বাইপাস মোড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাধা দিচ্ছে পুলিশ। তবে এর আগেই সাতক্ষীরা থেকে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক খুলনায় পৌঁছে গেছে। সাতক্ষীরা থেকে খুলনা রুটে কোনো বাস চলাচল করছে না। মূলত বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস বন্ধ রাখা হলেও মালিক সমিতি কারণ হিসেবে ‘ধর্মঘটের’ কথা বলছে। আজ শনিবার সাতটার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মী বহনকারী দুটি ট্রাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
আজ সকাল পৌনে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কের বিনেরপোতা এলাকায় অবস্থান করে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মোটরসাইকেলে করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা খুলনার দিকে যাচ্ছেন। বিনেরপোতা বাইপাস সড়কের মোড়ে ৮ থেকে ১০ জন পুলিশের একটি দল মাঝেমধ্যে দু-একটি মোটরসাইকেল আটকে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সাতক্ষীরার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। সকাল সাতটার দিকে দুটি ট্রাকে করে বিএনপির কর্মীরা গণসমাবেশে যাওয়ার পথে বাইপাস মোড়ে আটকায় পুলিশ। এরপর তাঁদের সাতক্ষীরার দিকে ফেরত পাঠায় তারা।
খুলনায় যাওয়ার পথে বিএনপির কর্মীদের বাধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স ম কাইয়ুম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাইপাস সড়কের বিনেরপোতা মোড়ে নিয়মিতই টহল দল থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তারা গাড়ি থামায় ও তল্লাশি করে। বিএনপির কর্মীদের কোনো গাড়ি আটকানো হয়নি।
সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, লোকজনের উপস্থিতি খুব কম। খুলনাগামী কোনো বাস সাতক্ষীরা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না। যশোরগামী যাত্রীবাহী বাস ১০ মিনিটের পরিবর্তে এক ঘণ্টা পরপর ছাড়ছে। ভাড়ায় চালিত ব্যক্তিগত কার কিংবা মাইক্রোবাসও যাচ্ছে না খুলনার দিকে।
সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শাহিন বিল্লাহ জানান, বৃহস্পতিবার থেকে সাতক্ষীরা, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, কলারোয়া ও তালা উপজেলার নেতা-কর্মীরা সড়কপথে মোটরসাইকেলে, যাত্রীবাহী বাসে, মাইক্রোবাসে খুলনায় যাওয়া শুরু করেন। একই দিন শ্যামনগর ও আশাশুনির নেতা-কর্মীরা নদীপথে খুলনা পৌঁছান। শুক্রবার থেকে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের নেতা-কর্মীরা ইজিবাইক, মাহেন্দ্র ও মোটরসাইকেলে খুলনায় পৌঁছান। গতকাল রাত তিনটার দিকে মোটরসাইকেলে করে একটি বড় বহর গেছে খুলনায়। আজ শনিবার সাতটার দিকে দুটি ট্রাকে করে তাঁদের নেতা-কর্মীরা খুলনায় যাচ্ছিলেন। তবে ট্রাক দুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী বলেন, তাঁদের লক্ষ্য সাতক্ষীরা থেকে ১০ হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে খুলনার গণসমাবেশে যোগ দেওয়ার। আজ সকাল সাতটা পর্যন্ত সাড়ে তিন থেকে চার হাজার নেতা-কর্মী সাতক্ষীরা থেকে নানা কৌশলে খুলনায় পৌঁছেছেন। এখনো তিন থেকে চার হাজার কর্মী পথে আছেন। তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খুলনায় পৌঁছাবে।
সড়ক-মহাসড়কে নছিমন-করিমন-ভটভটি-ইজিবাইকসহ সব অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে পরিবহন ‘ধর্মঘটের’ ডাক দেয় খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি। ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। বিএনপির দাবি, খুলনায় দলটির গণসমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
সাতক্ষীরার মাইক্রোবাসের চালক আনারুল ইসলাম জানান, খুলনায় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর হতে পারে বলে তাঁরা খুলনার দিকে শুক্রবার থেকে ভাড়ায় যাচ্ছেন না। বিএনপির পক্ষ থেকে গাড়ি ভাড়া চেয়েছিল। ভয়ে তিনি ভাড়ায় যাননি।
সাতক্ষীরা জেলা বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির আহ্বায়ক সাইফুল করিম বলেন, খুলনা থেকে ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় যাত্রীবাহী বাস সেদিকে যাচ্ছে না। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে। ছুটির দিন এমনিতেই যাত্রী কম। তারপর আজ আরও কম। সাতক্ষীরা থেকে যশোরে ১০ মিনিট পরপর যাত্রীবাহী বাস ছাড়া হয়। যাত্রী কম হওয়ায় এক ঘণ্টা পরপর বাস ছাড়তে হচ্ছে।