বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ নেতাকে পেটানো ও কোপানোর পর দুর্বৃত্তদের উল্লাস, পরে মৃত্যু

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আনারুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাট সদর উপজেলার বৈটপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা মো. আনারুল ইসলাম ওরফে আনাকে (৫০) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার আগে দুর্বৃত্তরা রামদা, হকিস্টিক, লোহার রডসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে শহরে মহড়া দেন। এরপর এসব অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলা করেন। তাঁকে পেটানো ও কোপানোর পর তাঁরা সেখানে উল্লাস করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

আনারুল ইসলাম বাগেরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি বাগেরহাট পৌর শহরের পূর্ব বাসাবাটি এলাকায়। গতকাল শনিবার বেলা একটার দিকে সদর উপজেলার বৈটপুর এলাকার চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সামনে তাঁর ওপর হামলা করেন একদল দুর্বৃত্ত। বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, হামলার আগে শহর থেকে চারটি মোটরসাইকেলে যুবলীগ নেতা সোহেল হাওলাদার ওরফে কালা সোহেলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে রামদা, হকিস্টিক, লোহার রডসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দড়াটানা সেতু পার হয়ে নদীর ওপারে চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সামনে যান। হামলার আগে ও পরে শহরের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার প্রকাশ্যে মহড়া দেন তাঁরা। দড়াটানা সেতু দিয়ে যাওয়ার সময়ও অনেকে তাদের দেখেন। প্রকাশ্যেই ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে মারপিট করা হয়। মারধরের পর তাঁকে সেখানে ফেলে উল্লাস করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

অভিযুক্ত সোহেল হাওলাদার জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি বাগেরহাট পৌর যুবলীগের ১ নম্বর সদস্য। বাগেরহাট সদর উপজেলার নাগেরবাজার এলাকার রশীদ হাওলাদারের ছেলে তিনি। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপন করেছেন। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে কল করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা তাঁর ছোট ভাইয়ের মাছের ঘের-সংক্রান্ত ঝামেলা মেটাতে গিয়ে খুন হন বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। নিহত ব্যক্তির ছেলে জিসান শেখের দাবি, ‘আমার বাবার সঙ্গে কারও কোনো ঝামেলা ছিল না। তিনি বাড়ির সামনে ছোট একটি মুদিদোকান চালাতেন। ছোট চাচা ঘেরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন শুনে তিনি সেখানে যান। ভাইয়ের ঝামেলা মেটাতে গিয়ে আমার বাবা খুন হন।’

নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই বাচ্চু শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেজভাইকে ওরা শুধু শুধু মেরে ফেলল। কারও সঙ্গে তাঁর বিরোধ নেই। ঘের নিয়ে আমার সঙ্গে বিরোধ ছিল কালা সোহেলের। ১৫ দিন আগে কালা সোহেল আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চান। ওই চাঁদার টাকা না দিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ায় তাঁরা হামলা করেন। সেখানে আমার ২০ বিঘার একটি ঘের আছে।’ স্থানীয় খালে মাছ ধরা-সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই ঘেরও আমরা করি। মূলত চাঁদা না দেওয়ায় এই হামলা।’

নিহত আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। রোববার সকালে বাগেরহাট পৌর শহরের পূর্ব বাসাবাটি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঘটনাস্থল বৈটপুর এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের পেছনের একটি সরকারি খালের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের বিরোধ চলছিল। সুরালী খাল আটকে অনেক বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছিল একটি পক্ষ। ২০১৫ সালে পৌর নির্বাচনের পর ওই পক্ষের কাছ থেকে খালটির দখল নেয় অন্য পক্ষ। দুই বছর আগে আবার খালটির একটি অংশ দখলে নেয় আগের পক্ষ। এ নিয়ে মাঝেমধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়। হামলাকারী ও হামলার শিকার দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

বাগেরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম শেখ বলেন, যাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাঁদের সবার নামই পুলিশ পেয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী মাফুজা বেগম বাদী হয়ে মামলা করবেন।