চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাহাড়ধস, অল্পের জন্য রক্ষা পেল পরিবারটি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা শাহি কলোনিতে সোমবার ভোরে পাহাড় ধসে পড়ে
ছবি: মোশাররফ শাহ

টানা বর্ষণে পাহাড়ধস হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা শাহি কলোনিতে এই ঘটনা ঘটে। এই সময় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন কার্যালয়ের প্রহরী মো. হানিফ ও তাঁর পরিবার।

মো. হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, যখন পাহাড়ধস হয়, তখন তাঁরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘরের টিনের ছাদে গাছ উপড়ে পড়ার বিকট শব্দে তাঁর ঘুম ভাঙে। তখন ঘরের দেয়াল ভেঙে গিয়ে একটি ইট তাঁর হাতে এসে পড়ে। এ সময় তিনি তাঁর আট বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুন মুনতাহাকে জড়িয়ে ধরেন। পরে আরও ইট গায়ের ওপর পড়তে থাকে। ইটের স্তূপ, মাটি ও আসবাবের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন তিনি।

স্ত্রী জিন্নাতুন নাহার, স্বামী মো. হানিফ ও মেয়ে এক কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। যে খাটে তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন, সেটিও ভেঙে যায়। জিন্নাতুন বলেন, গাছ পড়ার পর পাশের কক্ষ থেকে তাঁদের ছেলে জিহাদুল ইসলাম দ্রুত বের হয়ে আসে। পরে আশপাশের মানুষকে ডাকতে থাকে সে। এরপর মানুষজন এসে তাঁদের উদ্ধার করেন।

মো. হানিফ শাহি কলোনির যে বাসায় থাকতেন, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ (স্টেট) বিভাগ থেকে ভাড়া নেওয়া। দুই বছর ধরে তিনি সেখানে আছেন। আজ সকাল ১০টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, তাঁদের পুরো ঘরটি ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। পাহাড়ের মাটি ও একটি উপড়ে যাওয়া বড় গাছ ঘরের ওপর পড়ে আছে। ঘরের আসবাব, ফ্রিজ, টেলিভিশন সব ভেঙে গেছে। মোহাম্মদ হানিফের স্ত্রী জিন্নাতুন নাহার এবং তাঁদের ছেলে ও মেয়ে মিলে কিছু আসবাব উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

পাহাড়ধসের ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন কার্যালয়ের প্রহরী মো. হানিফ ও তাঁর পরিবার
ছবি: প্রথম আলো

জিন্নাতুন নাহার দাবি করেন, তাঁদের ফ্রিজ, টেলিভিশন, দুটি ল্যাপটপ, একটি ফোন নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘরের আসবাব—সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাঁর স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। সামান্য আয়ে তাঁদের সংসার চলে। এ অবস্থায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ থেকে সাহায্য চান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ধসের ঘটনা নতুন নয়। প্রায় প্রতিবছরই বৃষ্টির সময় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এ কারণে বৃষ্টি শুরু হলে মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ২০ বছর আগে পাহাড়ধসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়েছিল।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, পাহাড় ধসে বিভিন্ন সড়কে গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গত শনিবার তাঁরা মাইকিং করে পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন, তবে কর্মচারীদের কেউ তাঁদের কথা শোনেননি।